বিডিনিউজ ১০ ডটকম: পদ্মা সেতু প্রকল্পে কনসালটেন্ট নিয়োগে অনিয়মের ঘটনা এক যুগেরও বেশি সময় আগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় সে ঘটনা অনেকটা ‘ধামাচাপা’ই দেয়া হয়। ফলে অনুসন্ধানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণ হয়নি। পুরনো সেই অনুসন্ধান আবারো গতি পাচ্ছে। স্বয়ং দুর্নীতি দমন কমিশনই (দুদক) নতুন করে অনুসন্ধানে নামছে।
জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি আড়াল করা হয়েছিল। দুদকের নেতৃত্বে থাকা তৎকালীন কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে সেই অনুসন্ধান শেখ হাসিনা ও সরকারদলীয় নেতাদের অভিযোগ থেকে মুক্ত করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল তখন। একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংকও অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়।
তবে এক যুগের পর শেখ হাসিনার পছন্দে তৈরি করা দুদক নেতৃত্বের অবসানের ফলে এসব দুর্নীতির বিষয় আবারো সামনে চলে আসে। সম্প্রতি দায়িত্ব নেয়া নতুন কমিশন পুরোনো দুর্নীতির ফাইলগুলো চালু করছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে কি কি ঘটনা ঘটেছে, অনিয়ম কোথায় হয়েছে সেসব বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে দুদকের কোনো কর্মকর্তা মুখ না খুললেও একটি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর অনিয়মের বিষয়ে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হচ্ছে।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে ও বৃটিশমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দেয় দুদক। মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পাঠানো চিঠিতে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকের হিসাব বিবরণীসহ সব অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। পাশাপাশি অনুসন্ধান টিম প্রথম দফায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে নির্বাচন কমিশন এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের নথি তলব করেছে। গতকালও তাদের নামে পরিচালিত অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি ও দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ সরবরাহের জন্য বিএফআইইউ’র কাছে চিঠি দেয় অনুসন্ধান টিম। শিগগিরই আরও কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নথি তলব করে চিঠি পাঠানো হবে।
এর আগে গত ১৮ই ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করে দুদক। এ দলের প্রধান হলেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, এস. এম. রাশেদুল হাসান ও এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর। দুদকের এ দলটি আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের ৮ প্রকল্পে ২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। পাশাপাশি অনুসন্ধান করবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিরও।
-মানবজমিন