,

আশ্রয়ণ প্রকল্পের গাছ বিক্রি করলেন ইউপি সদস্য

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী: রাজবাড়ী সদর উপজেলার কল্যাণপুরে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে ১৭টি মেহগনি গাছ বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে।

তিনি কল্যাণপুর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মনির হোসেনের কাছে ৪২ হাজার টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেন। ইতোমধ্যে সেখান থেকে শ্রমিক দিয়ে মেহগনি সাতটি গাছও কেটে ফেলেছেন কাঠ ব্যবসায়ী মনির।

গাছ বিক্রির বিষয়ে গত সোমবার রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব হোসেন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল্যাণপুর গ্রামের আট নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আমাদের ২২টি পরিবারকে ঘর উপহার দেন। আমরা দেড় বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। আট নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আরিফ হোসেন কাউকে না জানিয়ে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে ১৭টি মেহগনি গাছ কল্যাণপুর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মনির হোসেনের কাছে ৪২ হাজায় টাকায় বিক্রি করেন। গত শুক্রবার সকালে মনির হোসেন গাছ কাটার শ্রমিক নিয়ে এসে গাছ কাটা শুরু করে দেন।

তখন আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা মিলে গাছ কাটতে বাঁধা দিলে ইউপি সদস্য আরিফ আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন। শুক্রবার দিনভর তারা ছয়টি গাছ কেটে ফেলেছেন। এবং পরদিন শনিবার সকালে এসে তারা আরও একটি গাছ কাটেন। আমরা বিষয়টি ইউএনওকে ফোনে জানালে তিনি আমাদের আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গাছ কাটা বন্ধ করেন।

এখন কাটা সাতটি মেহগনি গাছ আশ্রয়ণ প্রকল্পেই রয়ে গেছে। বাকি গাছগুলো যেন না কাটা হয় এবং ইউপি সদস্য আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেজন্য আমরা ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

প্রকল্পের অন্য বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, গত শুক্রবার আরিফ এসে আমাদের বলেন- আমি উপর থেকে গাছ কাটার অর্ডার এনেছি। আপনারা গাছের নিচ থেকে আপনাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেন। এরপর শ্রমিকরা গাছ কাটা শুরু করতে থাকেন, আমরা কযেকজন বাধা দিলে আরিফ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।

বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ঈদের তিনদিন আগে আরিফ মেম্বার আমার কাছে এসে বলেন- তিনি উপর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭টি মেহগনি গাছ বিক্রি করার অর্ডার এনেছেন। আমি গাছ কিনতে আগ্রহী কি না তিনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করেন। আমি অর্ডারের কাগজ দেখতে চাইলে আরিফ বলেন কাগজপত্র সব ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই। তার কথায় বিশ্বাস করে আমি গাছ কিনতে রাজি হই। এরপর গাছ দেখে তাকে নগদ ৪২ হাজার টাকা দেই। গত শুক্রবার সকালে শ্রমিক নিয়ে গিয়ে দিনভর ছয়টি গাছ কেটে ফেলি। পরদিন সকালে গিয়ে বাকি গাছগুলো কাটতে শুরু করি। একটি গাছ কাটা শেষ হলে গ্রাম পুলিশ এসে জানায় আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন। যে কারণে আমি শ্রমিকদের নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। এখন পর্যন্ত কাটা গাছগুলো সেখানেই রয়েছে। আরিফ মেম্বারের কাছে আমি গাছের টাকা ফেরত চাইলেও তিনি এখন টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।

ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে গাছ কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। গত শনিবার সকালে ইউএনওর কাছ থেকে ফোন পেয়ে আমি বিষয়টি জানতে পারি। তাৎক্ষণিক আমি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করি। তবে আমি জানার আগেই কাঠ ব্যবসায়ী মনির সাতটি গাছ কেটে ফেলেন। কাটা গাছগুলো আমার জিম্মায় রয়েছে। এখন ইউএনর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মার্জিয়া সুলতানা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে মেহগনি গাছ বিক্রির বিষয়টি আমি জেনেছি। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো আলীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে তার জিম্মায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। পরবর্তীতে বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় গাছগুলো বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। একইসঙ্গে এই গাছ বিক্রি ও কাটার সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর