,

৫৫ হাজারে বিক্রি এক বাগাড়

জেলা প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: বহু বছর ধরে পৌষ সংক্রান্তির দিনে মাছ মেলার আয়োজন করে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামবাসী। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও হাওর, বিল ও নদী থেকে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছে জমে ওঠে এই মেলা।

সদর উপজেলার পইল খেলার মাঠে রোববার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। সেখানে সবচেয়ে বড় ৫০ কেজি ওজনের বাগাড় মাছ নিয়ে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি দেড় লাখ টাকা চাইলেও শেষ পর্যন্ত মাছটি বিক্রি হয় ৫৫ হাজারে।

মেলা দেখতে ও মাছ কিনতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে মেলায়। হবিগঞ্জ জেলা ছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলা দেখতে আসেন অনেকে।

৫০ কেজি ওজনের বাগাড় মাছটি নিয়ে আসে বাহুবল উপজেলার ইসলাম উদ্দিন। তিনি জানান, শনিবার রাতে কুশিয়ারা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে মাছটি। সেখান থেকে তিনি মেলায় বিক্রির উদ্দেশে এটি কিনে আনেন।

এই বাগাড় ছাড়াও মেলার আকর্ষণ ছিল ২৫ কেজির বোয়াল ও ২০ কেজি ওজনের আরেকটি বাগাড়। এ ছাড়া বোয়াল, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। বড় মাছের পাশাপাশি ছোট অনেক প্রজাতির মাছও ওঠে মেলায়।

মেলায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ বিক্রেতা অংশ নিয়েছেন পইল মাছের মেলায়। বেচাকেনাও চলে ব্যাপক। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কেউ মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতে।

মেলায় আসা মাছ বিক্রেতা তোফায়েল মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর আমি মেলায় মাছ নিয়ে আসি। এ বছর আমি বিভিন্ন দেশী জাতের মাছ নিয়ে আসছি। আশা করছি সবগুলো মাছই বিক্রি করতে পারব, দামও ভালো পাব।’

অন্য এক বিক্রেতা মোশারফ মিয়া বলেন, ‘আমি এখানে যে মাছগুলো নিয়ে আসছি সবগুলো হাওরের এবং তাজা। যে কারণে আমার দোকানের সামনে মানুষের ভিড়ও বেশি। বেশ কয়েকটি মাছ বিক্রি করেছি। আশা করি সবগুলো মাছ বিক্রি করেই বাড়িতে ফিরব।’

হবিগঞ্জ শহরের তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘বাজারের চেয়ে মেলার মাছগুলো তাজা। এছাড়া এখানে বেশিরভাগ মাছই হাওরের। যে কারণে ছোট-বড় মিলিয়ে কিছু মাছ কেনার আশায় আসলাম। তবে আশা করছিলাম দাম একটু কম হবে। কিন্তু সেটা হলো না।’

শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মেলায় আসা খলিলুর রহমান বলেন, ‘মাছের প্রতি এমনিতেই আমার একটি আলাদা টান আছে। সব সময় বাজারে গিয়ে মাছ কিনতে পছন্দ করি। তাই কোনো বছরই পইলের মাছ মেলায় আসতে মিস করি না। বাজার ঘুরে দেখছি, নিজের পছন্দমতো বড় একটি মাছ কিনে নেয়ার আশায় আছি।’

বাহুবল থেকে মেলা দেখতে আসা স্কুল ছাত্র সৌরভ আহমেদ বলেন, ‘এবারই প্রথম পইলের মেলায় এসেছি। এত বড় বড় মাছ দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে। অন্যরকম একটা আনন্দ উপভোগ করছি আমি।’

মাছ মেলা ব্যবস্থা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা বসেনি। তাই এ বছর মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতা অন্য বছরের তুলনায় বেশি। আমরা আশা করছি, মেলায় অন্তত ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রির। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য ও খাবার মিলিয়ে আরও এক কোটি টাকার বেচা-কেনা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর