খুলনা ব্যুরো: দক্ষিণে কাজীবাছা নদী পশুর নদের সঙ্গে মিশে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে মিলেছে হিরণ পয়েন্টে। কাজীবাছা নদী থেকে শুরু শৈলমারী বা শোলমারী নদীর। বটিয়াঘাটা বাজারের পাশ দিয়ে এই শৈলমারী চলে গেছে পশ্চিমে।
বটিয়াঘাটা থেকে একটু এগোলে শৈলমারী খেয়াঘাট। শৈলমারী নদীর মুখে রয়েছে ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেট এবং ইটখোলা। শালতা নদী শৈলমারীতে মিশে শালতা নামে দক্ষিণে বয়ে গেছে। এই শালতা উত্তরে গিয়ে মিশেছে ভদ্রায়। একসময় শৈলমারী ও শালতা নদীতে ছিল প্রবল স্রোত। উত্তর দিকের বিল ও বসতির পানি গিয়ে পড়ত শৈলমারীতে। তবে উজানের পানি না পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে বিপুল পলি জমে শৈলমারীর বুকে। ফলে শৈলমারীর শুরুর অংশে ভাটার সময় এখন আর পানি থাকে না। ওই সময়টায় খেয়াঘাট অচল থাকে। মানুষ হেঁটে পার হয় নদী।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছরে শৈলমারী নদীর মৃত্যু ঘটেছে। একসময় এই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা চালানো কঠিন ছিল। অথচ এখন ভাটার সময় পানি এত কমে যায় যে নৌকা চালানোর উপায় থাকে না। মানুষ হেঁটে পার হয় নদী।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর দুই পারজুড়ে বিশাল চর। জোয়ার এলে ডুবে যায়, জোয়ার গেলে ফের ভেসে ওঠে। শৈলমারী যেখানে বাঁক নিয়ে উত্তরমুখী হয়েছে, সেখানে একটি ইটখোলা। আরেকটু এগোলে সালতা নদী যেখানে দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে সেখানে আরেকটি ইটখোলা। পশ্চিম পাশেও রয়েছে আরেকটি ইটখোলা। তারপর রয়েছে একাধিক ইটখোলা। এসব ইটখোলার কাঁচামাল নদীপারের পলি মাটি।
এলাকাবাসী জানায়, শৈলমারী উত্তর দিকে কৈয়া বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে বিল ডাকাতিয়ায়। সেখানে নদীটির বাঁক নেওয়ার মুখে পাউবোর (বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড) ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেট। এর পরই নদীপারে উঁচু বাঁধ দিয়ে দুই নদীর সম্মিলনস্থলে আরেকটি ইটখোলা। এটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত এমপি শেখ নুরুল হক। এখন তাঁর উত্তরাধিকাররা এটির মালিক। সেখানে রয়েছে একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে স্লুইস গেট তৈরি করেছে পাউবো।
জানতে চাইলে পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানার জমির ওপর স্লুইস গেট তৈরি করার কথা না। কাগজপত্র না দেখে বিস্তারিত বলতে পারছি না। ’
শৈলমারী নদীতে আগে প্রবহমান স্রোত থাকলেও এখন হেঁটে পার হওয়া যায়। মূলত নদীটিতে যত স্রোত কমেছে, তত বেড়েছে ইটখোলা। আগে বিল ডাকাতিয়ার পানি শৈলমারী হয়ে চলে যেত কাজীবাছায়। একই পথে জোয়ারের পানি চলে যেত উত্তর দিকে। এখন এই পথে আর বিলের পানি নামে না। ফলে শৈলমারী আর উজান অঞ্চলের পানি পায় না।
আবার শৈলমারীতে শালতা মিশে যেখানে দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে, তার পূর্ব পাশে আরেকটি ইটখোলা। এই ইটখোলাটি ক্রমশ দখল করছে নদী। ফলে আরো সংকুচিত হচ্ছে শৈলমারী।
খুলনা অঞ্চলের নদী ও পানি নিয়ে কাজ করা নাগরিক সংগঠন ‘পানি কমিটি’র সভাপতি এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলীয় নদীগুলো প্রাকৃতিকভাবে জোয়ারের প্রভাবাধীন। উজানের পানি এসব নদীর ভারসাম্য তৈরি করত। কিন্তু নদী ব্যবস্থাপনার নামে অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইস গেট নির্মাণ, ইটখোলা গড়ে তোলায় নদী দখল হয়ে মারা যাচ্ছে। শৈলমারী ও সালতারও একই অবস্থা।