বিডিনিউজ ১০, তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাংবাদিকতার বিকাশ, উন্নয়ন ও গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করল এ খাতের সাংবাদিকদের নতুন সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।
২৯ এপ্রিল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় সংগঠনটির। ৮৬ সদস্য নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে প্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।
এ দিন ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন : গণমাধ্যমের সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে টিএমজিবি। ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
গোলটেবিল আলোচনায় মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় এবং সহজ পার্থক্যটি হল- মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টার্যাক্ট করতে পারে। মানুষ ইন্টার্যাক্ট করতে পারে বলেই যে প্রতিষ্ঠানটির টিকে থাকার কথা ছিল না সেটি বিলিয়নস অব ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমানা তৈরি করা বা পাহারা দেয়ার সুযোগ নেই। ডিজিটাল দুনিয়ায় যোগ্যতা দিয়ে টিকে থাকা এবং যোগ্যতা অর্জন করার জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে।
খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রযুক্তিকে সামনে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনভাবে বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে যা অন্য যে কোনো গণমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে’।
পৃথিবী একদিন কাগজবিহীন হবে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি। ডিজিটাল যুগ অনিবার্য এবং ডিজিটাল রূপান্তর অনিবার্য।
এটি কেবল গণমাধ্যম নয়, এটি আমাদের জীবনযাপন, প্রচলিত শিক্ষা, অর্থ-বাণিজ্য নিরাপত্তা যেদিকেই তাকাই না কেন এসবের ডিজিটাল রূপান্তর অনিবার্য হয়ে গেছে’।
মোস্তাফা জব্বার ফেসবুক বিজ্ঞাপনকে ক্রসবর্ডার উল্লেখ করে বলেন, ‘দুনিয়ার যে কোনো প্রান্ত থেকে মানুষ বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বা প্রচারিত হচ্ছে। ফেসবুকের বিজ্ঞাপন যে ধরনের চ্যালেঞ্জিং, ফেসবুকের নিরাপত্তাও একইভাবে চ্যালেঞ্জিং’।
গোলটেবিল আলোচনার আগে বিষয়টি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।
তিনি বলেন, আমাদের এখনকার বিজ্ঞাপনের কথা ভাবতে হবে। এখন গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপনী ব্যয়ের কথা চিন্তা করলে তা দেখা যায় বেশিরভাগই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে খরচ হচ্ছে। তাই প্রথাগত বিজ্ঞাপন থেকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে ব্যয় কীভাবে কমানো যায় তা ভাবতে হবে। আর এতে কর কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার দশ ভাগের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে পণ্য ও সেবা গ্রহণ করছে উল্লেখ করে সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনলাইনে বিজ্ঞাপনে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়। সুতরাং আমাদের এ বিশাল ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে।
প্যানেল আলোচনায় বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, এখন বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে বিদেশে। তার অর্থ চলে যাচ্ছে দেশ থেকে।
আমাদের দেশীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করতে হবে। তা জনপ্রিয় করতে হবে যা চীন পেরেছে। সেটা করা গেলে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো মাধ্যমগুলো দেশ থেকে আর বিজ্ঞাপন নিয়ে যেতে পারবে না।
মোবাইল ফোন সেবাদাতাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ বলেন, ইউটিউব, গুগল, ফেসবুকে দেয়া বিজ্ঞাপনের টাকা তো বিদেশে চলে যাচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। এতে করে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিজ্ঞাপন দেশের বাইরে আর যাবে না।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টিআইএম নুরুল কবীরের সঞ্চালনায় টিএমজিবি আহ্বায়ক মুহম্মদ খানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। বৈঠকের আলোচনা শেষে কেক কেটে টিএমজিবির পথ চলা শুরুর জন্য শুভ কামনা জানান মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।