,

সাংবাদিককে ডেকে দুর্গাপুর মেয়রের ‘হত্যার হুমকি’

জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা: নেত্রকোণার দুর্গাপুরে সাংবাদিক রিফাত আহমেদ রাসেলকে প্রাণনাশের হুমকিসহ অকথ্য গালাগাল করেছেন পৌর মেয়র আলাউদ্দিন আলাল।

এ ছাড়া রিফাতের বাসার সামনের গেট ও একটি দোকানের শাটারেও হামলা করেছে কিছু দুষ্কৃতকারী।

দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বালুমহাল নিয়ে দেয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে এমন হুমকি দেয়া হয় বলে দাবি করেছেন রিফাত। এ ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।

দুর্গাপুর পৌরসভার তেরিবাজার এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রিফাত একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি। পাশাপাশি ‘সেভ দ্য অ্যানিমেল অফ সুসং’ নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনও পরিচালনা করেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় বালুমহাল ইজারার নামে সোমেশ্বরী নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে রিফাত তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে নির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ না করলেও স্ট্যাটাটিকে কেন্দ্র করে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হন বালু ব্যবসায় জড়িত দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র আলাল। পরে সেদিন সন্ধ্যায়ই রিফাতকে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে অকথ্য গালাগালসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি।

ওই সময় ধারণ করা ৯ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে। রেকর্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেয়র আলাল সাংবাদিক রিফাতকে অসংখ্যবার অকথ্য গালাগাল, হত্যার হুমকিসহ এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। রেকর্ডটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর মেসেঞ্জার থেকে মেসেঞ্জারে ঘুরছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেও আলাল ও তার লোকেরা রিফাতের বাবা রফিকুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে উত্তেজনাকর কথাবার্তা বলেন।

রিফাতকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে তাদের সামনে হাজির করতে বলেন তারা। এ ছাড়া রাত ৪টার দিকে রিফাতের বাসার সামনের দুটি দোকান এবং বাসার গেটেও হামলা করে কিছু দুষ্কৃতকারী। তখনও তারা রিফাত এবং তার বাবাকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়।

এসব ঘটনায় রিফাত আহমেদ রাসেল শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুর থানায় একটি জিডি করেন। এতে জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন তিনি।

দুর্গাপুর থানার ওসি মীর মাহবুবুর রহমান জিডির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা তার অভিযোগটি পেয়েছি। তবে তার বাসার সামনে কে বা কারা গিয়েছিল তা জানতে পারিনি।’

পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন আলাল বলেন, ‘রিফাত ও আমার বাসা খুব কাছাকাছি। তার বাবার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার বাবার উপস্থিতিতেই তাকে ডেকে এনে কিছুটা শাসন করেছি। তাকে শাসন করার সামাজিক অধিকার আমার আছে। তা ছাড়া তার বাবার সামনেই রিফাত ভুল স্বীকার করে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরাও বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।’

আলাল আরও বলেন, রিফাতের বাসার গেটে আমার কোনো লোক হামলা করেনি। শুনেছি রাতে কিছু মদখোর লোক সেখানে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। এরা কেউ আমার লোক বা কর্মচারী নন।’

আলাল দাবি করেন, রিফাত এর আগেও তাকে নিয়ে একাধিকবার লেখালেখি করেছে।

এদিকে রিফাত আহমেদ রাসেল বলেন, ‘আমি সোমেশ্বারী নদীর পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছি। এতে আলাল সাহেব বা কারও নাম উল্লেখ করিনি। তা ছাড়া বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এতে স্থানীয় পৌরসভার কোনো সম্পৃকতা নেই। আলাল সাহেবের মতো দুর্গাপুরের আরও অসংখ্য লোক বালু ব্যবসায় জড়িত। তাই তিনি একা কেন ক্ষুব্ধ হলেন বুঝতে পারছি না।’

হুমকির পর থেকে আত্মগোপন করে আছেন বলেও জানান রিফাত।

এই বিভাগের আরও খবর