,

শখের কবুতরে আয় ৮০ হাজার

জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ: সরকারি চাকুরির পাশাপাশি প্রথমে শখের বশে চারজোড়া দেশি কবুতর পালন শুরু করেন জাহাঙ্গীর আলম উজ্জল। সাফল্য পেয়ে এখন গড়ে তুলেছেন ৩০০ জোড়া বিদেশি জাতের কবুতরের খামার। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আয়ও ভালো হচ্ছে। তার দেখাদেখি এলাকার লোকজনও কবুতর পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জাহাঙ্গীর আলম উজ্জলের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের পালাহার গ্রামে।

জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম উজ্জল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করেন। রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করার সময় শখের বশে চারজোড়া দেশি কবুতর পালন করেন তিনি। ভালো লাগার পর শুরু করেন বিদেশি জাতের কবুতর পালন। এক পর্যায়ে আটজোড়া কবুতর হয়ে গেলে সেগুলো গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। বর্তমানে বাড়ির পাশে মুশুলী আমলীতলা বাজারে গড়ে তুলেছেন ‘মামা ভাগিনা পিজিয়ন’স গার্ডেন’ নামে একটি খামার। খামারে বিদেশি বিউটি কিং, সিরাজি, সার্টিন, ধামাচিনু, মিলিহুমা, সবজিহুমা জাতের ৩০০ জোড়া কবুতর পালন করছেন। এর মধ্যে ২০% কবুতর নিজেদের উৎপাদিত বাচ্চা থেকে এবং বাকি ৮০% বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা। প্রতিজোড়া বিউটি জাতের কবুতর বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। কিংজাতের কবুতর প্রতিজোড়া বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। সিরাজি বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। আবার সকল জাতের বাচ্চা কবুতর বিক্রি হয় বড় কবুতরের অর্ধেকদামে। কবুতর বিক্রি করতেও কোন ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। খামারের নামে অনলাইন এড্রেসে অর্ডার দিয়ে সবাই বাচ্চা কিনে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে মামা ভাগিনা পিজিয়ন’স গার্ডেনে গিয়ে দেখা যায়, একটি বড় ঘরের চারদিকে লোহার পাঁচ তাক বিশিষ্ট খাচায় অনেক কবুতর। সেখানেই খাবার দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন খাঁচায় কবুতর ডিমে তা দিচ্ছে। তবে তার মধ্যে অনেকগুলো প্লাস্টিকের ডিম। আসল ডিম ইনকিউবেটরে দিয়ে ফুটানোর পর বাচ্চা কবুতরের খাঁচায় দেওয়া হয়। কারণ অনেক সময় ডিম কবুতরের চাপে ভেঙ্গে যায়। পাশের একটি বড় ঘরে করা রয়েছে ‘ফাইং জোন’। যেসব বাচ্চা নিজে থেকেই খাবার খেতে পারে তাদের এখানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে তারা উড়তে শিখার পাশাপাশি পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর মিলে জোড়া বাঁধে। পরে তাদের অন্যত্র বিক্রি করা হয়। সব জেলায় বিক্রি হলেও ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি কবুতর ও বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে।

গার্ডেনের পরিচালক রায়হান মাহমুদ জানান, খামারটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবু প্রতিমাসে বিভিন্ন জাতের ২০ থেকে ২৫ জোড়া কবুতর ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ শখের বশেও বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রনাধীন এ খামারে তিনি ছাড়াও আরো একজনকে নিয়ে খামারটি তদারকি করে থাকেন। এ জন্য তারা প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পায়।

পরিচালক জানান, বাজার থেকে কিনে আনা গম, মটর, গ্রীনমটর, বাজরা ইত্যাদি এদের প্রিয় খাবার। কবুতরের রোগবালাই সর্ম্পকে তিনি বলেন, ইউটিউব দেখে নিজেরাই চিকিৎসা করি। তিনি আরো জানান, শীত মৌসুমে খামারটির পরিধি আরো বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে। পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তুলতে পারলে এখান থেকে ভালো আয় করা সম্ভব হবে।

মুশুলী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার উদ্দিন ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, এ ধরনের কাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমার কোন সহযোগিতার তাদের দরকার পড়লে অবশ্যই করব।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মলয় কুমার মোদক জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খামারের লোকজন কখনো আমাদের কাছে আসেননি। তাছাড়া খোঁজ নেবার মত আমাদের প্রয়োজনীয় লোকবলও নেই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাধ্যমত সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর