শরিফুল ইসলাম, নড়াইল: জন্মের পর থেকেই অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিশু নাইম হোসেন (১১) ও নাহিদ হোসেন(৬) এদের ধার ধারে না আপন বাবা মা। তাই আশ্রয় চাইলো পুলিশের কাছে। ঠাঁই পেলো পুলিশ কর্তার কাছে। সকালে কপালে দুমুঠো ভাত জোটেনি দু ভাইয়ের। দুপুরে পুলিশ কর্তার আদর স্নেহে দুই ভাইয়ের পেটে জুটলো ভাত।
নাইম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরে বেকারীতে কাজ করে। নাহিদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে মাত্র।
লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের ছেলে ওই দুটি শিশু। ইলিয়াস হোসেন মিলি নামে একজনকে বিয়ে করে এখন ঢাকায় থাকেন। আর শিশুদের আপন মা মিনা বেগম ঢাকায় গার্মেন্সে চাকরি করেন।
দাদী ফুলজান বেগমের কাছে বেড়ে ওঠে শিশু নাইম জানায়, আমার বয়স যখন ৬ বছর তখন আমার মা ঢাকায় চলে যায় এবং দুবছর পরে আবার ফিরে আসে। তখন নাহিদের জন্ম হয়। দুভাইকে রেখে বাবা-মা দুজনেই আবার চলে যায় ঢাকায়। এক বছর আগে মারা যায় দাদী। তাই ভাগ্য বিড়ম্বিত নাইম বেকারীতে পেটের দায়ে কাজ নেয়। এক মাস আগে সেখানে দুর্ঘটনায় আহত হয় নাইম। এখনো অসুস্থ। গত ১২ নভেম্বর সামান্য ভুলে ছোট ভাই নাহিদকে হাতা (চামচ) দিয়ে আঘাত করে ফুপু রমেছা। ভয়ে নাহিদ পালিয়ে চলে আসে তার একমাত্র আশ্রয় বড় ভাই নাইমের কাছে।
উপায়ন্তর না পেয়ে বুধবার(১৩ নভেম্বর) দুপুরে দুভাই এসেছিল থানায় আশ্রয় নিতে। থানায় পুলিশকে কিছু একটা বলবার জন্যে গেটের সামনে দিয়ে কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু থানায় ঢোকার সাহস হয়নি। হঠাৎই শিশুর দুটি নজরে পড়ে লোহাগড়া থানার এসআই মিল্টন কুমার দেবদাস এর। পুলিশ কর্তা শিশুদের থানার ভেতরে নিয়ে ঘটনা শুনে ব্যথিত হলেন। ওদের খাবার ব্যবস্থা করলেন।
পুলিশ কর্তা চৌকিদারের মাধ্যমে শিশুর চাচা রফিকুল ও রবিউল কে ডেকে আনলেন। সবার সামনে পুলিশ কর্তা শিশুর মাকে ফোনে বিষয়টি জানালে শিশুদের মা জানালেন ”ওদের ধার ধারি না”। আর বাবা জানালেন বিষয়টি দেখার জন্য শিশুর চাচাদের। পরে পুলিশ কর্তা শিশুদের তাদের চাচাদের জিম্মায় দিয়ে দিলেন।
চাচা রফিকুল ও রবিউল বললেন,আমরা দেখে রাখবো। শিশু নাইম পুলিশ কর্তাকে বলছিলেন, স্যার আমার একটাই চাওয়া ” আমার বাবা-মাকে এক করে দেন”। আমরা বাবা-মায়ের সাথে থাকবো।
এসআই মিল্টন কুমার দেবদাস বলেন, লেখাপড়া ও ভরণ পোষনের দায়িত্ব নেবার শর্তে চাচাদের জিম্মায় শিশু দুটিকে দিয়েছি। কোন সমস্যা হলে ওই শিশুদের আমার কাছে আসতে বলেছি।