,

‘রাজাকারপুত্র’ স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক!

জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে এক রাজাকারপুত্রকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে পদ দেয়া হারিচুর রহমান সোহান একাত্তরে ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের ছেলে।

৫ ডিসেম্বর আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক কবীর হোসেনের সই করা এক চিঠিতে হারিচুরকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়ার কথা জানানো হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং এক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা তাদের আপত্তির কথা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

হারিচুর রহমানের বাবা আবদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বলে তারা চিঠিতে উল্লেখ করেন।

ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লেখা চিঠিতে সই করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) হাফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা বহির খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান এবং গোপালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মোস্তাফিজ।

চিঠিতে তারা অভিযোগ করেন, আলফাডাঙ্গায় পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগী ছিলেন কামারগ্রামের আবদুর রহমান। সরকারের গেজেটে রাজাকার হিসেবে আবদুর রহমানের নাম আছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার গোপন প্রতিবেদনেও মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুর রহমান পাক বাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বলে উল্লেখ আছে।

মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ায় বঙ্গবন্ধু সরকার আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন বলেও তাদের ভাষ্য।

চিঠিতে আরও বলা হয়, হারিচুর ছাত্রজীবনে কোনোদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেননি। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কোনো সভা-সমাবেশেও অতীতে দেখা যায়নি তাকে। বরং ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ বলেন, ‘উপজেলা কমিটি আগে থেকে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে আমরাও হারিচুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন, তার বাবা একাত্তরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।’

শওকত বলেন, ‘জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়া উপজেলায় কাউকে পদ-পদবি দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা এখনও কোনো অনুমোদন দিইনি।’

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রবিন বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা উপজেলা কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ। করোনার কারণে এখন কাউন্সিল করতে পারছি না। তা না হলে অনেক আগেই কাউন্সিল করে নতুন কমিটি করা হতো।’

তিনি বলেন, ‘কোনো স্বাধীনতা বিরোধীর পুত্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে আসতে পারবে না। আমরা তদন্ত করব। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এখন তদন্ত করে দেখব। সত্যতা পেলে যারা এ কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এনায়েত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু কথা উঠেছে, সেক্ষেত্রে অভিযোগ তদন্ত করে জেলা ও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হারিচুর রহমান সোহানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

এই বিভাগের আরও খবর