,

‘মধুমতি বাওড়ে’ নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মধুমতি বাওড়ে নিষিদ্ধ সুতি, কাঁথা ও চায়না জাল দিয়ে নির্বিচারে ছোট মাছ নিধন করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ জালে দেশীয় জাতের ছোট-বড় বিলুপ্তি প্রায় মাছ ও মাছের ডিমসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি এবং উদ্ভিদ উঠে আসে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

এদিকে, সুতি জালের অবাধ ব্যবহারের কারণে মধুমতির তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বাওড়পাড়ের মানুষ। বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, ফসলী জমি, গাছপালা।

উপজেলার পরানপুর, তারাইল ও ঘোনাপাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকারে তৎপর হয়ে ওঠে জেলেরা। বাওড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এসব নিষিদ্ধ জাল ফেলা হয়। একটি জালের দৈর্ঘ্য ২শ’ থেকে ১ হাজার ফুট। এসব জালের একটির মূল্য ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। সারা রাত এসব জাল দিয়ে বাওড়ে মাছ শিকার চলে। যে কারণে অধিকাংশ সময় এসব জেলেদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করার কিছু থাকে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার কিছু প্রভাব ও বিত্তশালী ব্যক্তি জেলেদের দিয়ে নিষিদ্ধ জালের মাধ্যমে মাছ শিকার করিয়ে লাভবান হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাওড়ের প্রায় ১০ স্পর্টে এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। অথচ মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর এ বাওড়ে সরকারীভাবে লাখ লাখ টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়।

জেলেরা জানান, এসব জালে ছোট-বড় পুঠি, বেলে, নলা, চেলা, চিংড়ি, রুই, আইড়, কাতল, মৃগেল মাছের পোনা ধরা পড়ে। এমনকি মাছের ডিম, শামুক-ঝিনুক পর্যন্ত এসব জালে আটকা পড়ে। পানি ছাড়া কিছুই নিষ্কাষিত হতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাওড়পাড়ের এক বাসিন্দা জানান, মধুমতি বাওড়ে যে পরিমাণ নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। এটি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশী প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণি হারিয়ে যাবে। এলাকার কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় এসব জালের ব্যবহার হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘নিষিদ্ধ এসব জালের ব্যবহার সাধারণত রাতের বেলায় হয়ে থাকে। যে কারণে তাদের হাতেনাতে ধরা কঠিন হয়ে যায়। তবে খুব দ্রুতই নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

-লিয়াকত হোসেন লিংকন

এই বিভাগের আরও খবর