,

ভুয়া প্রমাণের পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম!

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: একাধিক যাচাই-বাছাই ও তদন্তে মুক্তিযোদ্ধা ভুয়া প্রমাণিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ভাতা বন্ধ এবং গৃহীত ভাতা ফেরতের নির্দেশনা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু তারপরও সর্বশেষ প্রকাশিত সমন্বিত তালিকায় তাদের নাম ওঠেছে।

এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। এ অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারসহ ১০ মুক্তিযোদ্ধা জামুকা, দুদক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ শেখ আদৌ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। কিন্তু অসদুপায় ও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। একই সঙ্গে তার মরহুম পিতা আব্দুল হক শেখ এবং ছোট ভাই কাওছার শেখের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ওঠান। এমনকি নিজে এবং সহোদরের নামে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও উত্তোলন করেছেন। তারা তিনজন লাল তালিকাভুক্ত ও ভাতা গ্রহণ করার বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের স্মারক নং ০৫.৩০.৩৫৪৩.০১০.০১.০০৫.১৪-১২৪৩ (৩) তারিখ-০৩/১২/২০১৬ মাধ্যমে ওই তিন জনের নাম ও পরিচয় উল্লেখপূর্বক তাদের মুক্তিযোদ্ধা সঠিকতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন। কমিটির কাছে অভিযুক্তরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি বলে স্বীকারোক্তি দেন। পরবর্তীতে কমিটির প্রতিবেদনে ওই তিনজন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে পারেন না বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতা ইসমত কাদির গামার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্তেও ওই তিন জন অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ হয়। তাদের নাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্তি করা হয়নি। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্র¿ণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার প্রতিনিধি শাহজাহান খান এমপির সভাপতিত্বে যাচাই-বাছাই এবং আপিলে তাদের নাম বাতিল তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

এ অবস্থায় কাশিয়ানী ইউএনও কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৫.৩০.৩৫৪৩.০১০.০০.০০১.০১৬-৪৭২ (২) তারিখ-২২.০৮.২০১৯ মাধ্যমে আব্দুল ওদুদ এবং তার সহোদর কাওছার শেখ কর্তৃক অবৈধভাব গৃহীত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রত্যেকের ২,৯৩,০০০/- টাকা করে মোট ৫,৮৬,০০০/-টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় সরকারি পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে করা হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে অদ্যাবধি সেই টাকা ফেরত ও কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি অভিযুক্তরা অবৈধ পন্থায় ও জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে।

অভিযোগকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার বলেন, ‘একাত্তর সালে আব্দুল ওয়াদুদের পিতা আব্দুল হক শেখ মানসিক রোগী ছিলেন। যুদ্ধের সময় আব্দুল ওয়াদুদ বাড়ি থেকেই বের হননি। আর তার ভাই কাওছার শেখ কৃষি কাজ করতো। মুক্তিযুদ্ধ কি? তা সে জানত না। তিনটি যাচাই-বাছাই ও তদন্তে তাদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরে মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অসাধু চক্রকে ম্যানেজ করেই তারা এমন কাজ করেছেন।

আব্দুল ওয়াদুদ শেখ বলেন, একাধিক যাচাই-বাছাইয়ে আমাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এমনকি আমাদের ভাতার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আমি আপিল করি। এ কারণে ভাতার টাকা ফেরত দেইনি। আপিলে আমার ও আমার ভাইয়ের নাম সমন্বিত তালিকায়ভুক্ত হয়েছে।

তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, গত বছরের জুন থেকে আমাদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম এসেছে। তাই বন্ধ ভাতা চালু করার জন্য আমি আবেদন করব।

সদ্য বিদায়ী কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, একাধিক যাচাইয়ে আব্দুল ওয়াদুদ ও তার ভাই এবং পিতা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েন। এ কারণে তাদের ভাতা বন্ধ করে গ্রতীত ভাতা ফেরত দিতে বলা হয়। এ ব্যাপারে তারা আপিল করেছে বলে জানায়। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা টাকা ফেরত দেবে না বলে আমাদের অবহিত করে।

জামুকার সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একাধিকবার যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া ব্যক্তির নাম মুক্তিযোদ্ধার নতুন তালিকায় আসার কথা নয়। তবে তার কাগজপত্র না দেখে বলা যাচ্ছে না। অভিযোগ হাতে পাওয়ার পর সমস্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখব। তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

-লিয়াকত হোসেন লিংকন

এই বিভাগের আরও খবর