,

ভাসানচরে স্বস্তিতে রোহিঙ্গারা

বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক: মিয়ানমারের নৃশংসতায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে রোহিঙ্গা কিশোরী সকিনা। একপর্যায়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে ভাই-বোন নিয়ে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে।

এতদিন কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে ছিল। একদিন হয় সে ভাসানচরে অবস্থান করছে। এখানে অল্প সময়ের অভিজ্ঞতায়ই সে পুরো পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে, যা ছিল না কক্সবাজারে।

শনিবার সকিনা সমকালকে জানায়, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সে ভাসানচরের গল্প শুনেছে। কিন্তু এখানে যে এত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা সে ভাবতেও পারেনি। তার কল্পনার বাইরে ভাসানচর। সুন্দর রাস্তা-ঘাট। পাকা ঘর। অনেক উঁচু ও প্রশস্ত ঘর। স্কুল আছে। পড়াশোনার কোনো অসুবিধা হবে না। খুবই আনন্দিত সে।

সকিনার নানি নজিবা খাতুনও এসেছেন ভাসানচরে। এক বোন এক ভাইকেও নিয়ে এসেছে সকিনা। সবার জন্য সুস্থ পরিবেশে থাকার সুযোগ পেয়ে ১৫ বছরের সকিনা খুবই খুশি। সকিনা জানায়, কক্সবাজারে সে চিন্তায় থাকত। ঝড়-বৃষ্টি হলে ভয় হতো ঘর নিয়ে। এখানে সেটা নেই। এমনকি খাবার-দাবার নিয়েও চিন্তা নেই।

একই অভিজ্ঞতা জানালেন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাসানচরে আসা এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এত নিরাপদ পরিবেশ আগে কল্পনাও করতে পারিনি। আমাদের ধারণার বাইরে সুযোগ-সুবিধা এখানে। কক্সবাজারে দুশ্চিন্তা হতো ঘর-বাড়ি নিয়ে। এখানে পাকা ঘর, থাকার সুব্যবস্থা, এমনকি খাওয়া-দাওয়া নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ সরকারের এমন পদক্ষেপে আমরা কৃতজ্ঞ।’

ইনায়েত উল্লাহ জানান, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ভাসনচরে এসেছেন তিনি। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে থাকার সুবিধা পেয়ে তিনি খুবই স্বস্তি অনুভব করছেন।

ভাসানচরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সুব্যবস্থার প্রশংসা করলেন আরেক রোহিঙ্গা আমির হোসেনও। তিন মেয়ে ও চার ছেলে নিয়ে ভাসনাচরে পৌঁছেন তিনি। স্ত্রী সফিকা বেগমও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমির হোসেনের ভাষ্য, এখানে মসজিদ, রাস্তা-ঘাট, খেলাধুলাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত। কক্সবাজারে থাকা আত্মীয়দের ভিডিও কলে দেখিয়েছি এ চিত্র। তাদের বলেছি, দ্রুত এখানে চলে আসতে। ওখানে ঝড়-বৃষ্টি হলে খুব দুশ্চিন্তা হতো। ঘুরগুলো দুর্বল ছিল।

মিয়ানমারের হামলা ও হত্যাযজ্ঞের মুখে ২০১৭ সালে পাহাড়-জঙ্গল, ঝড়-বৃষ্টি পাড়ি দিয়ে এ দেশে এসে আশ্রয় নেন রোহিঙ্গারা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রত্যাবাসনের আলোচনা চলছে। এরমধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়দানের লক্ষ্যে এ আবাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এরমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি শুক্রবার বিকেলে ভাসানচরে পৌঁছে। দলটিতে নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে মোট এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন। এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দলটি চট্টগ্রামের বোট ক্লাব থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে করে রোহিঙ্গারা ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর