,

বেড়িবাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটখোলায়

জেলা প্রতিনিধি, ভোলা: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে ইটখোলায় বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রতিদিন এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ট্রলিতে করে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটখোলায়।

এতে হুমকির মুখে পড়ছে শতকোটি টাকার সরকারি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। অন্যদিকে প্রতিদিন কয়েক শ মাটিবাহী ট্রলি বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করায় বাঁধের পাকা সড়কও ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বেড়িবাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হলেও লুটপাটকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। অন্যদিকে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

গত বুধবার সরেজমিনে চরফ্যাশন উপজেলার আছলামপুর ইউনিয়নের আয়শাবাগ গ্রামের মেঘনা নদীর বেড়িবাঁধে দেখা গেছে, বাঁধের বাইরের অংশের ঢালের নিচ থেকে দুটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ট্রলিতে করে পার্শ্ববর্তী ফ্যাশন ব্রিকস ও অন্যান্য জায়গায় নেওয়া হচ্ছে। ঢালের নিচে কেওড়া বনের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে মাটি কেটে ভরা হচ্ছে ট্রলিতে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে কাজী ব্রিকসের মালিক কাজী মনির হোসেন ওই মাটি বিক্রি করছেন। কাজী মনির চরফ্যাশন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। স্থানীয় লোকজন বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটতে নিষেধ করলে মাটি কাটতে আসা লোকজন তাতে কর্ণপাত করছে না। তারা উল্টো বলছে, ‘এ জমি মনির কাজী কিনে নিয়েছেন। তাঁর কাগজপত্রও আছে। তিনি তাঁর জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। ’

সাংবাদিকরা মাটি কাটার ছবি তুলতে গেলে কাজি মনিরের ভাগ্নে রাকিব এগিয়ে এসে বাধা দেন। তিনি বলেন, ‘এখানে ছবি তোলা যাবে না। আপনাদের কোনো কথা থাকলে কাউন্সিলর মনির সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। ’ এ সময় বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসকারী স্থানীয় এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে ওই লোকটিকে বেড়িবাঁধ থেকে এক দিনের মধ্যে ঘর সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন রাকিব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একাধিক বাসিন্দা জানায়, এর আগে বাঁধের কয়েক শ মিটার দূর থেকে মাটি কাটলেও নতুন করে এখন বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটা শুরু করেছে কাজী মনিরের লোকজন। মাটি কাটার ফলে বাঁধের সঙ্গেই যেভাবে বড় বড় পুকুর তৈরি  হচ্ছে, তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি এলে বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। স্থানীয় লোকজন বলে, ‘আমরা তাদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তাঁরা বলেন, বেড়িবাঁধ তাঁরা কিনে নিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা শক্তিশালী হওয়ায় অনেকে তাঁদের ভয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। ’

এ ব্যাপারে ফ্যাশন ব্রিকসের ম্যানেজার মো. নুরে আলম জানান, তাঁরা মাটি কাজী ব্রিকসের মালিকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন।

কাজী ব্রিকসের মালিক ও চরফ্যাশন পৌরসভার কাউন্সিলর কাজী মনির বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটা বাঁধের জমি না, আমার নিজের কেনা জমি। ’

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমি এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’

উল্লেখ্য, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ৩০টি ইটখোলা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র পাঁচটির অনুমোদন থাকলেও বাকিগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। অবৈধভাবে চলছে এই ইটখোলাগুলো।

এই বিভাগের আরও খবর