,

বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি ভোলার সিরিজ শুরু

ক্রীড়া প্রতিবেদক: ঝড়ের পরের গুমোট আবহাওয়ার মতো বিশ্বকাপের ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলকে কুঁকড়ে রেখেছে। অনুশীলনে প্রাণ নেই। হৈ-হুল্লোড়, উচ্ছ্বাস কিছুই চোখে পড়েনি গত কয়েক দিন। সবাই ‘মুখস্থ’ কাজটুকু করে গেছেন চোখমুখ বুজে। গতকাল বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহর কথাতেও বোঝা গেল, দলকেন্দ্রিক বেশিরভাগ সিদ্ধান্তে তার অংশগ্রহণ নেই।

মুশফিকুর রহিমের বাদ পড়া, বিশ্বকাপের ব্যর্থতা এবং পিচ নিয়ে জানতে চেয়ে কাঙ্ক্ষিত উত্তর পাওয়া যায়নি। ভালো ভালো কথা বলে জুম সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন অধিনায়ক। বোঝাই যায়, বিশ্বকাপ পিছু ছাড়েনি ক্রিকেটারদের। প্রচণ্ড চাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন সবাই। মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলে স্বাভাবিকতায় ফিরতে চান মাহমুদউল্লাহরা। নতুন দল নিয়ে সিরিজের শুরুতে ঝটকা দিতে চান ফেভারিট পাকিস্তানকে এবং সেটা মিরপুরের গ্যালারিকে সঙ্গী করেই। প্রায় দুই বছর পর আজ গ্যালারিতে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। দর্শক ফেরার এমন দিনে সত্যিকার অর্থেই যেন শুরু হচ্ছে টাইগারদের ‘নবযাত্রা’।

মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে চাইলেও পাকিস্তান ভুলতে দিচ্ছে না। কারণ, বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটের তকমা নিয়ে সিরিজ খেলতে এসেছে তারা। গ্রুপ পর্বে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল খেলা পাকিস্তান এই সিরিজেরও ফেভারিট। বাংলাদেশ সেখানে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে শূন্য ঝুলি নিয়ে ফিরেছে দেশে। ১৫ দিনের ব্যবধানে টি২০ দিয়ে নতুন পথচলা শুরু। যে পথ কণ্টকাকীর্ণ। বলতে গেলে সিনিয়রশূন্য নতুন দলের নতুন মিশন। ভেঙেচুরে নতুন দল গড়ার পেছনেও বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে রান করতে না পারায় মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ব্যাটিং লাইনআপে আনা হয়েছে নতুন মুখ। নাঈম শেখের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন সাইফ হাসান। বিশ্বকাপের আগেও যার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সীমিত ছিল টেস্ট আঙিনায়। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে যিনি কিনা এখনও সফল হতে পারেননি, আজ হয়তো সেই সাইফের টি২০ অভিষেক। এই পথচলা মসৃণ হলে টি২০-তে নাঈমের জুটি হয়ে যেতে পারেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তার ওপর আস্থা আছে অধিনায়কের, ‘সাইফ এখনও অনেক তরুণ। সে দারুণ একজন ব্যাটার। তার ভেতরে যে কোনো বোলারকে খেলার সামর্থ্য আছে। আমাদের পুরো দলের বিশ্বাস, সে ভালো করবে।’

সাকিব আল হাসান না থাকায় তিন নম্বরে ব্যাট করবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগেও এই পজিশনে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। ইয়াসির আলী রাব্বিও আলোচনায় আছেন। তবে মিডল অর্ডারে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিশ্বকাপের বোলিং লাইনআপ দেখা যেতে পারে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। টিম ম্যানেজমেন্টের একজন জানান, তিন পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদের সঙ্গে খেলতে পারেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ আর অফস্পিনার শেখ মেহেদী অটো চয়েস।

বিশ্বকাপের ব্যর্থতা চাপা দিতে নতুন উদ্যমে টি২০ শুরুর স্বপ্ন দেখা রূঢ় বাস্তবতা। তবে শুরুটা ভালো হয়ে গেলে এ দলই হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। সে জন্য আজ একটি ভালো শুরু চাই বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, টুর্নামেন্ট বা সিরিজে ভালো খেলতে শুরুটা ভালো করতে হয় বাংলাদেশকে। সদ্য সমাপ্ত টি২০ বিশ্বকাপে যেটা হয়নি স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায়; যেটা টুর্নামেন্টে মাহমুদউল্লাহদের দিয়েছে কঠিন সময়। এবার সিরিজ শুরুর আগেই ভালো শুরুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেন অধিনায়ক, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বাংলাদেশ দলের একটা ভালো শুরু সব সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরিজে ভালো শুরু করব ইনশাআল্লাহ। কারণ, এই ফ্লো দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

মিরপুরে খেলা হলে প্রত্যাশা বেশি থাকে। বিশ্বকাপের আগে এই ভেন্যুতেই অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছেন মাহমুদউল্লাহরা। ২০১৫ সালে এই মাঠে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে ২০ ওভারের ম্যাচে হারায়। যে আত্মবিশ্বাস ২০১৬ সালের এশিয়া কাপেও ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২ ম্যাচ খেলে যে দুটি টি২০ জিতেছে বাংলাদেশ, তা মিরপুরে। বাবর আজমদের বিপক্ষে আজ তৃতীয় জয়ের খোঁজে নামবে টাইগার বাহিনী। অধিনায়ক যদিও চ্যালেঞ্জ দেখছেন, ‘আমরা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করছি সবকিছু। তারপরও আমি বলব, অবশ্যই সিরিজটা চ্যালেঞ্জিং হবে। পাকিস্তান এ মুহূর্তে অন্যতম সেরা একটি দল। আর আমাদের অনেক নতুন খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছে। সেদিক থেকে আমাদের জন্য খুব কঠিন একটা সিরিজ। তবে তিন বিভাগে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে, ভুল কম করলে সুযোগ থাকবে।’

বিশ্বকাপের আগে উইকেট নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বিশ্বকাপের ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতার পর দাবি উঠেছে, ভালো উইকেটে খেলার। ট্রিপিক্যাল মিরপুরের উইকেটে ভালো করা কঠিন। সে কারণে স্পোর্টিং উইকেট করা হয়ে থাকতে পারে। বাবর আজমও বিশ্বাস করেন, বিশ্বকাপের মতো উইকেট পাবেন না মিরপুরে, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতোই থাকবে। অনুশীলন যতটা করে বুঝেছি, আমিরাতের মতো রান এখানে হবে না। এখানে যেটা করতে হবে, হাতে উইকেট রাখতে হবে। তাহলে কাজ সহজ হবে পরে। বিশ্বকাপেও যেমন আমরা উইকেট হাতে রেখে পরে শেষ সাত-আট ওভারে যতটা সম্ভব বেশি রান করতে চেয়েছি, এ পরিকল্পনাই থাকবে এখানে। উইকেট যতটা হাতে রাখব, ততটা কার্যকর হবে।’ কৌশল দু’দলেরই আছে। সেই কৌশল যে দল বেশি প্রয়োগ করতে পারবে, সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে তাদের।

এই বিভাগের আরও খবর