,

বিদ্যালয়ে রাতেও উড়ছে জাতীয় পতাকা

জেলা প্রতিনিধি, ভোলা: ভোলায় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করতে দেখা গেছে ভোলা সদর উপজেলার এক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ওড়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় সরজমিনে ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ২০১নং শিবপুর কালিকীর্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

স্থানীয় মো. আলামিন হোসেন বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ফুল দিয়ে কিছু ছবি তুলে পতাকা না নামিয়ে চলে গেছেন। সে দিন রাতেও বিদ্যালয়ে পতাকা উড়েছে এবং আজ রাত ১১টায়ও এখানে পতাকা উড়ছে। দুই রাত ধরে জাতীয় পতাকা উড়লেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পতাকা নামানোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

স্থানীয় আব্দুর রহমান বলেন, ৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পেয়েছি। এ পতাকার অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। স্কুল চলাকালে রাতের বেলা জাতীয় পতাকা উড়ছে এটা কর্তৃপক্ষের অবহেলা।

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব আদিল হোসেন তপু বলেন, জাতীয় পতাকা অবমাননা করার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। শিক্ষকরা যদি জাতীয় পতাকার সম্মান নষ্ট করেন, তাহলে তাদের কাছ থেকে আমরা নতুন প্রজন্ম কী শিখব? দেশবিরোধী একটি চক্র সবসময় আমাদের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা অবমাননা করায় লিপ্ত রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে যারা নির্দিষ্ট সময়ে পতাকা না নামিয়ে রাতের আঁধারে উত্তোলিত রেখেছেন তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত কি না তা তদন্ত করে বের করা উচিত।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়শা বেগমের সঙ্গে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাহামিদা সুলতানা জানান, সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। তবে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হয়। যেহেতু আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো পিওন নেই, তাই আমরা নিজেরাই বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করি ও নামিয়ে থাকি। ওই দিন স্থানীয় একজনকে পতাকা নামানো জন্য বলা হয়েছিল। সে হয়ত পতাকা নামাতে ভুলে গেছে। এ ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

জানতে চাইলে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরিন সুলতানা জানান, সদর উপজেলার ২০১নং শিবপুর কালিকীর্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাতে জাতীয় পতাকা উড়ছে- এমন খবর পেয়ে জাতীয় পতাকা নামানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি আগামীকাল (বুধবার) বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উড়ানোর নিয়ম রয়েছে। রাতে বিদ্যালয়ে পতাকা ওড়ার বিষয়টি অবমাননার সামিল। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আইন ভঙ্গ করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। জাতীয় পতাকার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের ২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের পাঁচ জন সহকারী শিক্ষককে সরকারি চাকরি আচরণ বিধিমালা ২০১৮-এর ২(খ) এর উপধারা (অ), (আ), (ই) ধারা মোতাবেক অসদাচরণ ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের শোকজ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর