,

বিচারকের অনুরোধে ১৭ বছরের সংসার জোড়া লাগল

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে তিন শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং আদালতের বিচারকের কথা শুনে বিচ্ছেদ হওয়া দম্পতি আবার বিয়ে করেছেন।

রোববার বিকেলে বিচারকের খাস কামরায় দুই আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।

বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া এলাকার কৃষক শাহানুর ইসলাম (৪২) দাম্পত্য কলহের জেরে ছয় মাস আগে স্ত্রী আকতারা বানুকে (৩৬) তালাক দিয়েছিলেন। এতে ভেঙে যায় তাদের ১৭ বছরের বন্ধন। তবে তারা দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন।

এর আগে ৩০ মার্চ যৌতুকের দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন আকতারা বানু। মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্তের নামে সমন জারি করেন আদালত। রোববার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। আদালতেই দেনমোহরের ১ লাখ ১ হাজার টাকা স্ত্রীকে পরিশোধ করার প্রস্তুতি ছিল তার। শাহানুরের প্রতিজ্ঞা ছিল, কারাগারে গেলেও আর আকতারার সঙ্গে সংসার করবেন না।

তবে এজলাসে শাহানুরের হাজির হওয়ার পর ঘটে গেল নাটকীয় ঘটনা। অন্যদের সঙ্গে ওই দম্পতির তিন সন্তানও উপস্থিত হয়েছিল। এ সময় সন্তানদের দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বাবা-মা। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তিন সন্তানের দিকে চেয়ে তাদের কলহ ভুলে সংসারে ফেরার অনুরোধ জানান।

কিছুক্ষণ চিন্তার একপর্যায়ে দুজনেই সংসারে ফিরতে সম্মত হন। এরপর তাদের আবারও বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পড়ান আদালত মসজিদের ইমাম আব্দুল খালেক। আপসনামা দাখিল করার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন ওই দম্পতি।

গৃহবধূ আকতারা বানু বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। যা হয়েছে আল্লাহর রহমতে ভালোই হয়েছে। এখন আমরা আবারো একসঙ্গে থাকব এবং কলহ-বিবাদ যাতে না হয়, সে চেষ্টা করব।

গৃহবধূর স্বামী শাহানুর রহমান বলেন, আমরা সুখে শান্তিতেই ছিলাম। পারিবারিক কাজকর্ম নিয়ে একটু তর্ক-বিতর্ক হলেই স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে চলে যেতো। তাই রাগে ক্ষোভে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের পর দিন খুব কষ্টে গেছে।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী মিথ্যে মামলা করায় আরও রেগে যাই। আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তিন সন্তানের দিকে চেয়ে আপসের কথা বলেন। তখন সব ভেবে চিন্তে আপস করার সিদ্ধান্ত নেই।

বাদী পক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম তাদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক আমাদের সেই সুযোগটি করে দিয়েছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী হাজিজুর রহমান বলেন, খুব সামান্য বিষয়েই তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারকের সঙ্গে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এই বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেল।

এই বিভাগের আরও খবর