শেখ সাইফুল ইসলাম কবির: বাগেরহাটের শরণখোলার অধিকাংশ এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। গত দুইদিন ধরে লাগাতার ভারী বর্ষণে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৪০টি গ্রাম এখন পানি নিচে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার।
হাজার হাজার মানুষের বসত ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। দুই দিন ধরে অসংখ্য পরিবারে চুলো জ্বলেনি। সরকারি খাদ্য গুদাম, পোস্ট অফিস, টেলিফোন অফিস, হাসপাতাল চত্বর, মাঠ-ঘাটে কোমর সমান পানি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সারাদিন।
সরকারি হিসাবে দেড় হাজার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও স্থানীয়দের তথ্যমতে এর সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি। কয়েক হাজার হেক্টর আমন ও অন্যান্য ফসলের ক্ষেত ডুবে রয়েছে পানিতে। কয়েকটি খামারের সহ¯্রাধিক হাঁস-মুরগি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আঞ্চলিক মহাসড়কের চারটি স্থানে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির পাশাপাশি সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের টিম ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় খাদ্য গুদামের পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন।
ধানসাগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম টিপু জানান, তার ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের ১০সহ¯্রাধিক পরিবারে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বহু পরিবার রান্নাবান্না করতে পারছে না। অনেকের শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটছে। নজরুল ফকিরের মুরগির খামারে পানি ঢুকে ৭০০মুরগী মারা গেছে। মনমতো কুলুর মারা গেছে দুই শতাধিক হাঁস। তিন শতাধিক মাছের ঘের ও দুই সহ¯্রাধিক পুকুরের প্লাবিত হয়েছে। তার পরিষদের মেম্বার তপু বিশ্বাসের ঘেরের প্রায় ২০লাখ টাকার সাদা মাছ ও গলদা চিংড়ি ভেসে গেছে।
খোন্তাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের প্রায় ২০হাজার পরিবারে ঘরবাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে। মাঠ-ঘাঠে শুধু পারি আর পানি। তিন সহ¯্রাধিক পুকুর এবং তিন শতাধিক ঘের তলিয়ে সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। মাছ ও অন্যান্য রবি শস্যের যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমান প্রায় তিন কোটি টাকা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তিনি।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন জানান, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তার ইউনিয়নে অবস্থিত। এর মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে পোস্ট অফিস ও খাদ্য গুদাম। রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুল, রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেলিফোন অফিস এবং হাসপাতাল চত্বর পানিতে থৈ থৈ করছে। উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারসহ ৮টি গ্রামের ১০হাজার পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের মধ্যে ও চুলায় পানি উঠে যাওয়ায় দুই দিন ধরে অনেক পরিবারে রান্না হয়নি। অসংখ্য পুকুর ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫হাজার পরিবার। শাতধিক মাছের ঘের ও সহ¯্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষেতখামার সবই পানির নিচে। নির্মণাধিন বেড়ি বাঁধের স্লুইস গেটগুলো বন্ধ থাকায় পানি সরতে পারছে না। যার ফলে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বলতে গেলে পুরো শরণখোলা এখন পানির নিচে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক হিসাবে সরকারি তালিতাভুক্ত ১৪৫০টি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়া তথ্য পাওয়া গেছে। যার ক্ষতি পরিমান এক কোটি ২৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক হিসাবে এক হাজার হেক্টর আমন, ২০ হেক্টর সবজি ও এক হেক্টর পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখেছি। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বেড়ি বাঁধের সকল স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় এস্কাভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধ কেটে খাদ্য গুদামের পানি সরানোর কাজ চলছে। বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলমান রয়েছে।