জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: বিয়ে বর্হিভূত সম্পর্কের টানে ঘর ছেড়েছেন লাভলী আক্তার সুমাইয়া। তাকে ফিরে পেতে আদালতে ছুটেছেন স্বামী সুজন সিকদার। ৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের এমন সমাপ্তি মানতে পারছেন না সুজন। স্ত্রীকে ফেরত পেতে তিনি আদালতের সহায়তা চান।
ঘটনাটি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টী ইউনিয়নের ঠ্যানঠেনিয়ার ভাবুকদিয়া গ্রামের।
স্বজনরা জানান, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের নয়ন সিকদারের ছেলে সুজন সিকদার। ২০১৫ সালের ২ মার্চ পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন সুজন। কনে লাভলী আক্তার সুমাইয়া সালথা উপজেলার ভাবুকদিয়া গ্রামের মান্নান মোল্লার মেয়ে। বিয়ের পর সুজন স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন।
৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের মাঝে সুজন কিছুদিন কাতারে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ফরিদপুর শহরে একটি রডের কোম্পানিতে ফোরম্যানের কাজ নেন। যথারীতি থাকছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। ৮ বছরের সংসার জীবনে সন্তান না থাকায় কিছুটা অখুশি ছিলেন সুজন-সুমাইয়া দম্পতি। তবে এ নিয়ে কলহ ছিল না। সম্প্রতি সুমাইয়ার বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। গত ২৬ মে বাড়িতে ফিরে সুজন দেখতে পান স্ত্রী ঘরে নেই।
সুজন পরে জানতে পারেন আলামিন শেখ নামে এক নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে পালিয়েছেন সুমাইয়া। ঘরছাড়ার আগে সুমাইয়া নিয়ে গেছেন নগদ ৩ লাখ টাকা, দুই ভরি সোনার গহনা ও নিজের ব্যবহার করা সব কাপড়।
আত্মীয়দের মাধ্যমে বৌকে ঘরে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে সুজন অবশেষে ফরিদপুর জজ কোর্টের ৬ নম্বর আমলী আদালতে মামলা করেছেন। আসামি করা হয়েছে সুমাইয়ার পাশাপাশি তার কথিত প্রেমিক আলামিন শেখকে।
অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তরুন বাশার অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
মামলার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম স্টালিন বলেন, ‘সুজন ও সুমাইয়া আইনত এখনও স্বামী-স্ত্রী। অন্যদিকে আলামিন বিবাহিত, তার বিরুদ্ধে স্ত্রীর করা মামলা বিচারাধীন। এমন অবস্থায় আলামিন অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে।’
অভিযুক্ত আলামিন শেখ ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের শোলাকুন্ডু গ্রামের মৃত কলিমদ্দিন শেখের পুত্র। বিবাহিত আলামিনের ৩ বছর বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে।
আলামিনের সৎভাই দুলাল শেখ বলেন, ‘ছোট ভাই আলামিনকে ৫ বছর আগে বিয়ে দিয়েছিলাম। তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। তবে স্ত্রীর সঙ্গে মিল নেই আলামিনের। তার বিরুদ্ধে স্ত্রীর করা নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা আছে। এখন আবার সে অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়েছে।’
সুজনের স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিতে তিনি আলামিনকে অনুরোধ করেছেন বলে জানান।
মামলার বাদী সুজন সিকদার বলেন, ‘সন্তান ছাড়া সংসারে কমতি ছিল না কিছুরই। সুমাইয়াকে ভালবেসে সবকিছু করেছি। তারপরও আমার স্ত্রী গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কয়েক মাস ধরে মোবাইলে তাদের যোগাযোগ চলছিল। রোজার মধ্যে এমন বিষয় ধরা পড়লে আমি শ্বশুরকে জানাই।
‘আত্মীয় হওয়ার সুবাদে আলামিনের যাতায়াত ছিল এ বাড়িতে। সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুমাইয়াকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গেছে। স্ত্রীকে আমি অনেক ভালোবাসি, তাকে ফেরত পেতে চাই।’
সংবাদ পেয়ে আলামিনের বাড়িতে গিয়েছিলেন সুজন ও তার শ্বশুর মান্নান মোল্লা। কিন্তু তার আগেই সেখান থেকে সরে পড়েন আলামিন ও সুমাইয়া।
মান্নান মোল্লা এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি মেয়েকে ফিরে পেতে চাই। আলামিনের পরিবারকে বার বার অনুরোধ করেছি। তারা কোন প্রকার সহযোগিতা করছে না।’
অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে আলামীন ও সুমাইয়ার সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। পলাতক অবস্থায় তারা মোবাইল সেট বন্ধ রেখেছেন।