,

দুই দফা আগাম বন্যার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ও আম্ফানের মতো ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এবার তৈরি হয়েছে আগাম বন্যার শঙ্কা। ইতিমধ্যে পশ্চিমা ঝঞ্ঝার সঙ্গে অকাল মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করছে সারাদেশে। ফলে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর আগাম সক্রিয়তায় পুরো জুন মাসেই সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এই মৌসুমি অতিবৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলতি মাসের শেষ নাগাদ বন্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে অন্তত এক-দুটি মৌসুমি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। ইতিমধ্যে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপরে ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপ রূপ পরিগ্রহ করছে। গভীর সঞ্চারশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে আকাশে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, মৌসুমি বায়ু আগাম বিস্তার লাভ করায় এবার বর্ষার আগেই বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমেও বেশি হতে পারে বৃষ্টির পরিমাণ। ফলে চলতি জুনের শেষ নাগাদ এক দফা এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরেক দফা বন্যা হতে পারে। আর এবার বৃষ্টি বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে বন্যার বিস্তৃতিও বেশি হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই বন্যার সম্ভাবনা বেশি। আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, এ মাসের শেষের দিকে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলে এর সম্ভাবনা বেশি। এখনো দেশের নদ-নদীতে পানি একটু বেশি আছে মনে হয়। মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঢাকা ও সিলেট বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। মে ও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ১০ থেকে ৯০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে হাতিয়ায়, ৯৩ মিলিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এবার আগেই দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মে মাসের শেষে ও জুনের শুরুতেই যমুনায় যে পরিমাণ পানি বেড়েছে, তা ১৯৮৮ সালের পর আর দেখা যায়নি। এতে আগাম হুমকি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আবহাওয়া দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে হারে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হচ্ছে, তাতে দেশের উপকূলীয় এলাকা বাদে সারাদেশেই এবার বন্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। জুনের শেষ নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের কারণে এই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিতে পারে। এবার আগেই নদীগুলোতে পানি এসে গেছে। যমুনা নদীর পানিও এবার আগেই অনেক বেড়ে গেছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদীর সমতলে ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৯টি স্টেশনে সমতলে নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর পানি বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। তারা জানায়, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপত্সীমার ১ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে ১৫ জুনের পর যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমা অতিক্রম করে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়েও ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে গত কয়েক দিন যাবত্। এসব রাজ্যে নিয়মিত ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির কারণে সেখান থেকে নেমে আসা ঢলে গতকাল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ও চা-বাগান এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের চণ্ডীছড়া চা-বাগান থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত পাঁচটি ব্রিজের ক্ষতি হয়েছে।

বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত :পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তত্সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত লঘুচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। লঘুচাপটি গতকাল শনিবার ভারতের ওড়িশার স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবে দেশের প্রায় সব জেলাতেই হালকা থেকে ভারী বৃষ্টি হবে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এই বিভাগের আরও খবর