,

দশ রুটে হচ্ছে পাতাল রেল

হামিদ-উজ-জামান: যানজটমুক্ত মহানগরীর জন্য তৈরি হবে আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়ে। এক্ষেত্রে পুরো রাজধানীকে এই নেটওয়ার্কে আনতে প্রাথমিকভাবে পাতাল রেলের ১০টি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেটি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেতু বিভাগে।

ইতোমধ্যেই সেতু বিভাগের এ সংক্রান্ত কমিটিগুলো রুট পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে। ২৩৮ কিলোমিটার পূর্ণাঙ্গ নেটওয়ার্কে স্টেশন থাকবে ২১৬টি। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে ‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা’ প্রকল্পটির আগস্ট পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা সূত্রে তা জানা গেছে। সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।

সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন রোববার বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ৯০ কিলোমিটার সাবওয়ে করার কথা ছিল। তখন চারটি রুট নির্ধারণ করা হয়। এখন সেটি বেড়ে ২৩৮ কিলোমিটার হওয়ায় রুটের সংখ্যাও বেড়েছে। যেখানে এমআরটি (মেট্রোরেল) থাকবে না। সেসব রুটকে সাবওয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার কারণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হলেও এখন তা কেটে গেছে। সম্ভাব্যতা সংক্রান্ত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩২১ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত রুটগুলো হচ্ছে, রুট বি : গোলারটেক-তুরাগ সিটি-মাটিকাটা রোড-বিমান বাহিনী সদর দফতর-বারিধারা ডিওএইচএস-পূর্বাচল সেক্টর ২১-পূর্বাচল সেক্টর ইস্ট এবং পূর্বাচল মালুম সিটি পর্যন্ত। এই রুটের দৈর্ঘ্য ২৯ দশমিক ৯২ কিলোমিটার এবং স্টেশন হবে ২৬টি। এছাড়া রুট-সি : রামচন্দ্রপুর-নবোদয় হাউজিং সোসাইটি-মোহাম্মদপুর-মহাখালী-পুলিশ প্লাজা, হাতিরঝিল-আফতাবনগর নর্থ এবং সানভ্যালি ইস্ট ভায়া : পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার এবং স্টেশন ১৫টি। রুট-ডি : ভাওয়াল-চান্দিপুর-আটিবাজার-ইস্ট নন্দিপাড়া-বিটিটিসি, বনশ্রী এবং ডেমরা রোড পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ১৮ দশমিক ৯১ কিলোমিটার এবং স্টেশন ১৭টি। রুট-এফ : শংকর-ওয়েস্ট ধানমণ্ডি-ধানমণ্ডি ক্লাব-ত্রিমোহনী এবং ওয়েস্ট ধীতপুর পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার এবং স্টেশন ১৩টি। রুট-জি : আদাবর-মোহাম্মদপুর-নিউ চৌরাস্তা মোড়-শ্মশানঘাট এবং বসুন্ধরা রিভার ভিউ নর্থ পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার এবং স্টেশন ১৫টি। রুট-জে : দারুস সালাম-পীরেরবাগ-শেওড়াপাড়া-জলসিঁড়ি সেক্টর ৪-জলসিঁড়ি সেক্টর ১৫ সাউথ-জলসিঁড়ি সেক্টর ১৫ নর্থ-পূর্বাচল সেন্ট্রাল এবং পূর্বাচল সেক্টর-২৮ পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং স্টেশন ২৪টি। রুট – ও : টিএসসি-মাছিমপুর-উত্তরা সেক্টর ১০-রজনীগন্ধা মার্কেট-রাওয়া-মহাখালী-খিলগাঁও-রাজারবাগ-কমলাপুর-সায়েদাবাদ এবং মুরগিটোলা পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ২৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং স্টেশন ২৪টি। রুট-পি : আজিজ মার্কেট-মাটিকাটা রোড-ভাসানটেক বাজার-গুলিস্তান-নয়াবাজার-সদরঘাট-খেজুরবাগ-মুসলিম নগর এবং তেঘরিয়া বাজার পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ২৩ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এবং স্টেশন ২০টি। রুট-এস : কামরাঙ্গীরচর-শহীদনগর-লালবাগ-রায়েরবাগ-মাতুয়াইল-সাইনবোর্ড-সানারপাড়া-মৌচাক-চিটাগাংরোড-এবং কাঁচপুর পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং স্টেশন ১৮টি। এছাড়া রুট-টি : আদর্শনগর-কলমা-আকুপাড়া-আশুলিয়া মেডল টাউন ওয়েস্ট-আশুলিয়া মডেল টাউন সেন্ট্রাল-নোয়াপাড়া (দক্ষিণ খান) নদ্দাপাড়া (দক্ষিণ খান), বরুয়া নর্থ, বরুয়া সাউথ-পিওএইচএস-বসুন্ধরা ব্লক কে অ্যান্ড এল-শিবু মার্কেট-ডিসি অফিস-নিউকোর্ট এবং চাষাঢ়া পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য ৪৭ দশমিক ৫৪ কিলেমিটার এবং স্টেশন থাকবে ৪৪টি।

২৭ অক্টোবর জারি করা পিএসসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার হাউজহোল্ড সার্ভে করেছে। এছাড়া ৭০টি স্থানের ট্রাফিক সার্ভে (টিসি) এবং ১২০টি স্থানের বাস রুট সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। ১৫৭টি পয়েন্টের জিও টেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন শেষ হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২৩৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নেটওয়ার্কের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ৯০ কিলোমিটারের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও প্রাথমিক ডিজাইন প্রণয়ন করেছে। ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে সাবওয়ে আইনের খসড়া। সেটি এখন সেতু বিভাগে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ জন। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার। সড়কের ঘনত্ব ৯ দশমিক ০১ শতাংশ। অথচ আদর্শমান হচ্ছে ২০-২৫ শতাংশ সড়কের ঘনত্ব। ফাঁকা জায়গা ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, থাকা প্রয়োজন ১৫-২০ শতাংশ। সড়কের বর্তমান সক্ষমতা ৩ লাখ হলেও বিআরটিএর নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সেতু বিভাগ ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর