,

দরপত্র বিক্রির আগেই নির্মাণকাজ শুরু!

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা: বরগুনার বেতাগীতে দরপত্রের শিডিউল বিক্রি ও জমাদানের সময় শেষ হওয়ার আগেই গোপনে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে নির্মাণকাজ শুরুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রায় অর্ধকোটি টাকার এ কাজ শুরু করছেন উপজেলার একজন ঠিকাদার। এ ঘটনায় অন্য ঠিকাদারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

তবে ওই ঠিকাদারের দাবি, সংশ্লিষ্টরা তাকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলামের স্বাক্ষরে গত ৯ জানুয়ারি (০২/২০২১-২২) নম্বর ই-টেন্ডার নোটিশ প্রচার করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী নোটিশটি দৈনিক পত্রিকায়ও প্রকাশ করা হয়। ওই নোটিশে ১ ও ২ নম্বর প্যাকেজে বিবিচিনি ইউনিয়নের বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুলের সীমানা প্রাচীর ও স্কুলের ভেতরে আরসিসি রাস্তা নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।

এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ লাখ টাকা। ওই দুটি প্যাকেজের শিডিউল বিক্রির শেষ সময় উল্লেখ করা হয় আজ বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত।

তবে গত ১৫ দিন ধরে উপজেলার বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুলের নির্মাণকাজ চলছে। দরপত্র আহ্বান করার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে এত বড় কাজ কীভাবে গোপনে একজন ঠিকাদার শুরু করতে পারেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন উপজেলার একাধিক ঠিকাদার।

ই-টেন্ডার পদ্ধতি হওয়ায় সারা দেশ থেকেই অনলাইনে টেন্ডার শিডিউল ক্রয় ও জমা দেওয়ার কথা। সেই হিসাবে উপজেলার ও বাইরের সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে স্থানীয় মো. জাকির নামের একজন ঠিকাদার হঠাৎ করেই লোকজন নিয়ে ১৫ দিন আগেই ওই স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

দরপত্রে অংশগ্রহণ ছাড়া এভাবে হঠাৎ করে কাজ শুরু করায় হতবাক হয়ে পড়েন অন্য ঠিকাদাররা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার জানান, দরপত্রের নোটিশ প্রচার করার পর দরপত্রে অংশগ্রহণ ছাড়াই কাজ শুরু করা নজিরবিহীন। প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাজ এভাবে করার কোনো নিয়ম নেই।

তারা আরও জানান, টেন্ডারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা যেমন সাশ্রয় হতো, তেমনি একজন ভালো মানের ঠিকাদারের হাতেই কাজটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে স্কুলের চারপাশে কলাম ঢালাই ও মাটি কাটার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে সাত-আটজন শ্রমিক কাজ করছেন।

নির্মাণকাজের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, ঠিকাদার জাকির হোসেন এ কাজ করছেন।

এ বিষয়ে মো. জাকির বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাকে কাজ করতে বলেছে, তাই আমি কাজ করছি। আমি নিজেও দরপত্র ক্রয় করেছি। পরে যে কাজ পাবেন, তার সঙ্গে সমন্বয় করে নেব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘ওইখানে এখন কে কাজ করে সেটা আমার দেখার বিষয় না। টেন্ডার সম্পন্ন হওয়ার পর আমি ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেব। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাজ করলে সেই দায়ভার আমাদের না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, বিষয়টি কেবল জানলাম। খোঁজ নিয়ে জটিলতা সমাধান করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর