,

তিন দিন দাঁড়িয়েও মিলল না তেল

নীলুফা বেগম বলেন, ‘তিন দিন এখানে তেল নিতে আইলাম, এক দিনও পাইলাম না। আজকে নয়টা বাজে আইছি। সকাল থেকে নাশতাও খাইনি। আগের দিন আইছিলাম সকাল ১০টায়। কিন্তু কিচ্ছু পাইলাম না।’

নীলুফার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। স্বামী মারা যাওয়ায় পর দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন সায়েদাবাদ এলাকায়। গৃহকর্মীর কাজ করেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে পড়ে কলেজে। ছেলেটি এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। এই ঢাকায় টিকে থাকার সংগ্রামে নীলুফার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নীলুফা বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের বাসায় কাজ করে যা আয় করি, তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাই। বাসাভাড়া দেই আট হাজার টাকা। এহন তেলের দাম অনেক বাড়ছে। ১ লিটার তেল ১৯০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া সম্ভব না। তাই এহান থাইকা থেকে তেল কেনার চেষ্টা করছি। কিন্তু তিন দিনেও আমি তেল, চিনি কিছুই জোগাড় করতে পারলাম না।’

একজন ব্যক্তি তুলনামূলক কম দামে টিসিবির ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারেন। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকগুলোতে প্রতিদিন ৫০০ লিটার তেল, ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ এবং চিনি ও মসুর ডাল ৫০০ কেজি করে আনা হয়।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দয়াগঞ্জ মোড়ে ট্রাক সেলের সামনে দেখা গেল, পণ্য সরবরাহের অব্যবস্থাপনায় দেরিতে এসেও অনেকে পণ্য নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। কে কার আগে পণ্য নেবেন, তা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে পণ্য শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত হট্টগোল লেগেই ছিল।

সেখানে পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, তেলের দাম বাড়ার পর থেকে মানুষের লাইন বাড়ছে। তাঁরা যে পণ্য আনছেন, তাতে সবার চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এখন লাইনে মারামারিও হচ্ছে। মাঝেমধ্যে সামাল দেওয়া যায় না।

দয়াগঞ্জে টিসিবির তালিকাভুক্ত পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এগ্রো বি এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রতিদিন আমরা ৫০০ লিটার তেল, ৫০০ কেজি চিনি, ৫০০ কেজি ডাল ও ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ দিয়ে থাকি। আমরা সর্বোচ্চ ২০০ মানুষকে পণ্য সরবরাহ করতে পারি। কিন্তু মানুষ আরও বেশি আসেন। তাই অপেক্ষার পরও অনেকে পণ্য না পেয়ে বাসায় চলে যান।’

এই বিভাগের আরও খবর