,

টমেটো চারার নার্সারি করে কোটিপতি কৃষক

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা শান্তিতে জাতিসংঘ পদকপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্য এম এ করিম (৫৫)। চাকরি থেকে অবসরে গেলেও কাজ থেকে অবসর মেলেনি তার। কারণ তিনি একজন সফল টমেটোর চারা উৎপাদক। ড্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী তো হয়েছেন তিনি, দুইশ মানুষের কর্মসংস্থানও করেছেন। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারার নার্সারি করেন তিনি। সেখান থেকে কোটি টাকার ওপরে আয়ও করেছেন। আলাপকালে এমন কথাই জানান এমএ করিম।

ড্রাফটিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এমএ করিম জানান, বনবেগুন হচ্ছে টমেটোর একটি জংলি জাত, গ্রামগঞ্জে এ বেগুনের হরেক নাম। এ বেগুন চারার গোড়ার দিকের অংশের সঙ্গে টমেটোর চারার উপরের দিকের অংশ জোড়া দিয়ে করা হয় ড্রাফটিং। এভাবে লাগানো টমেটোর চারা বড় হয়ে ঢলে পড়ে না, রোগবালাইও তেমন হয় না। ফলন মেলে প্রচুর। যেখানে সাধারণ একটি গাছে পাঁচ-দশ কেজি টমেটো মেলে, সেখানে ড্রাফটিং করা প্রতি গাছে মেলে বিশ থেকে পঁচিশ কেজি। তিনি জানান, ড্রাফটিং করা টমেটো গাছ পানি সহনীয়। তাই ভারি বৃষ্টিতেও এই টমেটো গাছ নষ্ট হয় না। ড্রাফটিং চারার চাহিদা অনেক। নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের আট থেকে দশটি জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। অনেকে মৌসুমের আগেই চারার সংখ্যা জানিয়ে অর্ডার দেন। তাদের সময়মতো সরবরাহ করতে হিমশিম খান। তিনি জানান, অনেকে আষাঢ়-শ্রাবণ থেকে চারা রোপণ শুরু করেন। আগাম টমেটো বের করতে পারলে লাভ বেশি। তখন কেজিপ্রতি টমেটো ১০০-১১০ টাকা বিক্রি হয়।

এমএ করিম জানান, এ বছর তিনি ২০ লাখ চারার ড্রাফটিং করেছেন। বারি-৮ (বাংলাদেশি), মঙ্গল রাজা (ফ্রান্স) নামে টমেটোর বীজ এবং বনবেগুনের বীজ বপন করেন। বনবেগুনের দুই মাস বয়সী চারার সঙ্গে টমেটোর এক মাস বয়সী চারার ড্রাফটিং করেছেন। ড্রাফটিং করা চারা ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোপণ করতে হয়। প্রতিটি চারা ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করেছেন। বছরে প্রায় ২০ লাখ চারা বিক্রি করেছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। তার সঙ্গে নিয়মিত খেটেছেন প্রায় ১৫০ জন দক্ষ শ্রমিক। তাদের মাসিক আয় ২০-২৫ হাজার টাকা।

সাবেক এ সেনাসদস্য ২০০২ সালে অবসরে এসে টমেটো চাষ শুরু করলে উৎপাদনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। টমেটো চাষে সফল চাষি হিসেবে তিনি ২০০৫ সালে পেয়েছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার। পুরস্কারটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তখন তার হাতে তোলে দেন। এর পর থেকে এ উৎসাহকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন তিনি সফল কৃষক।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এমএ করিম একজন সফল ড্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদক। তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অনেকের কর্মসংস্থান করেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর