,

জীবিত বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি, যশোর: চার বছর ধরে রোগাক্রান্ত হয়ে বিছানাবন্দী যশোর মনিরামপুর উপজেলার দিগঙ্গা গ্রামের পটল মণ্ডল (৭০)। বাস্তবে এই বৃদ্ধা জীবিত হলেও সমাজসেবা অফিসের কাছে তিনি মৃত। পটল মণ্ডলকে মৃত দেখিয়ে দেড় বছর আগে তাঁর ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা সমাজসেবা অফিস।
এর ফলে বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র এই বৃদ্ধা।

পটল মন্ডলের পরিবারের অভিযোগ, হরিদাসকাটি ইউনিয়ন সমাজকর্মী লোকমানুল হক মৃত দেখিয়ে বৃদ্ধা পটল মন্ডলের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকবার এ সমাজকর্মীর দ্বারস্থ হয়েও ভাতা চালু করতে পারেননি তাঁরা। তবে লোকমানুল হকের দাবি বিষয়টি তিনি জানেনই না।

সরেজমিনে দিগঙ্গা গ্রামে গিয়ে বৃদ্ধা পটল মণ্ডলকে ঘরের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি ওই গ্রামের মৃত বিলাস মণ্ডলের স্ত্রী। চার বছর ধরে প্যারালাইজড আক্রান্ত হয়ে বিছানাবন্দী হয়ে আছেন এ বৃদ্ধা।

বৃদ্ধার ছেলের বউ নমিতা রানী বলেন, ‘আমার স্বামী দয়াল মণ্ডল দিনমজুর। দিন এনে দিন খাই। আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার প্রণব কুমার বিশ্বাস পাঁচ-ছয় বছর আগে আমার শাশুড়ি পটল মণ্ডলকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করে দেন। ভাতার টাকায় আমার শাশুড়ির চিকিৎসা চলত। গত দেড় বছর ধরে আমার শাশুড়ি ভাতা পান না।’

নমিতা রানী বলেন, ‘গত বছরের মার্চ মাসে আমার শাশুড়ি ভাতার ৩ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তারপর আর টাকা তুলতে পারিনি। কয়েক মাস আগে হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদে এশিয়া ব্যাংকের এজেন্টের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁরা বলেছে এ অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। পরে সুন্দলী বাজারে আরেকটা এশিয়া ব্যাংকের এজেন্টের কাছে যাই। তাঁরা বই দেখে বলেছে এই বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নমিতা আরও বলেন, টাকা না পাওয়ায় সমাজসেবা কর্মী লোকমানুল হকের কাছে বই নিয়ে মনিরামপুর অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে বই রেখে দেন। কিন্তু তিন মাস পার হলেও তিনি সমস্যা সমাধান না করে বইটি রেখে দেন। পরে অনেক কষ্ট করে লোকমানুল হকের কাছ থেকে বই উদ্ধার করে আনি। তিনি বই ফেরত দিলেও আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেননি। এ জন্য দেড় বছর ধরে আমার শাশুড়ির অ্যাকাউন্টে টাকা আসে না।’

হরিদাসকাটি ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রণব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘পটল মন্ডলের অসহায় অবস্থা দেখে তাঁকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। এখন শুনি তাঁর ভাতা দেড় বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।’

এ বিষয়ে লোকমানুল হক বলেন, ‘বিষয়টা আমি জানি না। কারও বই তো আমি আটকে রাখিনি।’

মনিরামপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, বৃদ্ধা পটল মণ্ডলের ভাতা বন্ধের বিষয়ে তাঁর স্বজনেরা আমাকে জানাননি। আজ জানতে পেরে অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখেছি তাঁর ভাতা বন্ধ আছে।

তিনি বলেন, ‘যে কোনো কারণে পটল মণ্ডলের ভাতা বন্ধ হয়ে আছে। আমি সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর