খুলনা প্রতিনিধি: এক মাস পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল আজ রোববার থেকে আবার চালু হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পাটকলগুলোতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ছিল। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিল চালানো হবে বলে মিলের কর্মকর্তারা জানান।
খাদ্য ও কৃষি বিভাগে চটের বস্তার সংকট নিরসনে আজ থেকে সীমিত পরিসরে পাটকল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোর ৫ টা থেকে পাটকলগুলো চালু করা হবে, চলবে দুপুর ২ টা পর্যন্ত। মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে। মিল কলোনিতে বসবাসকারী শ্রমিকরাই এই কাজে যোগ দিতে পারবে। আর দেশের বাড়ি বা বাহিরে অবস্থান করা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে না পারলেও থাকবে সাধারণ ছুটির আওতায়। এদিকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ২ মাসের বেতন ও মজুরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
বিজেএমসি’র তথ্য অনুযায়ী, খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলে প্রায় ১০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির আওতায় পাটকল বন্ধ রাখা হয়। তবে চাল ও বীজের মোড়কে পাটজাত বস্তার সংকট তৈরি হলে সীমিত আকারে পাটকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয় বিজেএমসি। গত ২৩ এপ্রিল প্লাটিনাম জুট মিলের বোর্ডরুমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রকল্প প্রধানদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে পাটকল চালু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
তবে শনিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে বৈঠক করে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধুমাত্র স্ব স্ব মিল কলোনিতে অবস্থানরত শ্রমিকরাই কাজে যোগ দিতে পারবে এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। পাটকল চালু হলেও করোনার কারণে বিদেশে এখনই পাটপণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। তবে খাদ্য অধিদপ্তর ও বিএডিসি’র চাহিদা অনুযায়ী বস্তা তৈরি হলে দেশের অভ্যন্তরে এগুলো বিক্রি করা যাবে। এতে বকেয়া পরিশোধ করা সহজ হবে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, শনিবার বিকেলে মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়েছে, আজ রোববার থেকে মিল সীমিত পরিসরে চালু রাখা হবে। লকডাউনের কারণে বাহিরে থাকা শ্রমিকরা আসতে পারবে না এবং কাজে যোগদান করবে না। তবে তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, করোনার কারণে মিলগুলো বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এ অবস্থার মধ্যে আজ থেকে পাটকলগুলো সীমিত পরিসরে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩০ এপ্রিল দুই মাসের বেতন ও মজুরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবি জানান তিনি।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, সরকারি বিভিন্ন দফতরের জন্য বস্তা তৈরি করতে পাটকলগুলো সীমিত পরিসরে খোলার থাকবে। এরমধ্যে ভোর ৫টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এক সিফটে শ্রমিকরা কাজ করবে। এর মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলায় লকডাউনের কারণে ঝুঁকি এড়াতে সকল শ্রমিককে এখনই কাজে আনা হচ্ছে না। তবে তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। তবে কতো শ্রমিক কাজে যোগদান করতে পারবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কাজে যোগদানের পর বলা যাবে। আপাতত ৫ মে পর্যন্ত মিল এভাবেই চলবে। পরবর্তী সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিজেএমসি খুলনা জোনাল সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘খাদ্য ও কৃষি বিভাগের জন্য চটের বস্তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই এ সংকট মোকাবিলায় স্বল্প পরিসরে পাটকল চালুর পরিকল্পনা হয়েছে। আজ রোববার থেকেই পাটকল চালু হতে পারে। শ্রমিকরা মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজে যোগ দেবে।