,

‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা

জেলা প্রতিনিধি, বগুড়া: বগুড়ার গাবতলীতে সানজিদা খাতুন (৪) নামে এক শিশুকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ এবং পরে হত্যার অভিযোগে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

টেলিভিশনে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ অনুষ্ঠান দেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের কৌশল রপ্ত করে বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। গ্রেপ্তার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ বুধবার রাতে তার অপর সহযোগীর বাড়িতে রাখা স্টিলের বাক্স থেকে সানজিদার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত সানজিদা গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামেরর রাজমিস্ত্রী শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই কিশোরও একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে একজন লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে। অপরজনের বাবার নাম সাজু প্রামণিক।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর দুই কিশোর শিশু সানজিদাকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহত সানজিদার মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গাবতলী থানার ওসি জিয়া লতিফুল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত একজন জানিয়েছে- তার খালার বিয়ে উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য তারা সানজিদাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। দুই কিশোর জানিয়েছে- তারা ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের কৌশল রপ্ত করে।

পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সানজিদা বুধবার সকালে বাড়ির উঠানে খেলছিল। তবে সকাল ১০টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না পাওয়ায় অনেকে ধারণা করেন, পুকুর বা ডোবার পানিতে সে তলিয়ে গেছে। এজন্য ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ও ডোবায় তল্লাশি চালিয়ে ফিরে যায়। এরপর ওইদিন দুপুরে একটি মোবাইল ফোন থেকে স্থানীয় এক নারীর মোবাইল ফোনে কল করে সানজিদাকে অপহরণের কথা জানানো হয়। তাকে পেতে হলে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে বলেও জানানো হয়।

ওই নারী বিষয়টি নিখোঁজ সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিককে জানান। এরপর সানজিদার বাবা সেই মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তার কাছেও মেয়েকে ফিরে পেতে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। তবে কয়েকবার কথা বলার পর অপহরণকারীরা টাকার অঙ্ক কমিয়ে ৫০ হাজার দাবি করে এবং বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্রামের একটি কালভার্টের নিচে টাকা রেখে আসতে বলে। পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্যও বলে দেয়।

এরপর সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক পুরো ঘটনাটি গাবতলী থানায় জানালে পুলিশ নির্ধারিত সময়ের আগেই অপহরণকারীদের বলে দেওয়া সেই কালভার্টের কাছে ওঁৎ পেতে থাকে। ৭টার দিকে এক ব্যক্তিকে ওই কালভার্টের কাছে আলো দিয়ে কিছু খুঁজতে দেখে পুলিশ ও সানজিদার স্বজনরা সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক করে। পরে মুখ দেখে তাকে চেনা যায়।

তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ রাত ১১টার দিকে একই গ্রামে সাজুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে সানজিদার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ওই রাতেই পাশের কদমতলী গ্রামে নানার বাড়ি থেকে পুলিশ অপর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

গাবতলী থানার ওসি জিয়া লতিফুল জানান, অভিযুক্ত একজন নিজেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দাবি করেছে। আরেকজন বলেছে, সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থানায় মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার দুইজনকে আদালতে পাঠানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর