,

কমিটিতে দলীয় নেতা হত্যার আসামিও

খুলনা ব্যুরো: ২০১৭ সালের ২৫ মে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন হন খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। ওই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এই খুনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শালকে। ওই বছর ৩০ মে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন তিনি। আদালতে পুলিশের দাখিল করা চার্জশিটে তাকে চার নম্বর আসামি করা হয়।

গত ৫ মার্চ অনুমোদন হওয়া খুলনা জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে সেই হাসনাত রিজভী মার্শালকে সদস্য করা হয়েছে। সদস্য করা হয়েছে নিহত মিঠুর ভাই সেলিম সরদারকেও। ভাই হত্যা মামলার আসামির সঙ্গে একই কমিটিতে নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর স্ত্রী জোবায়দা খান সুরভী সমকালকে বলেন, মিঠুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। জামিনে বের হওয়ার পর থেকে মার্শালকে নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। বিএনপি তাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় পড়ল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিঠু পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক স্বজন সমকালকে বলেন, জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে আলোচনা শুরুর পর থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল, অনিন্দ ইসলাম অমিত, আমীর এজাজসহ বেশ কয়েকজনকে ফোন করা হয়েছিল। তখন মার্শালকে কমিটিতে না রাখার জন্য তাদের অনুরোধ জানানো হয়। বিএনপি নেতারাও আশ্বাস দিয়েছিলেন; কিন্তু তারা কেউ কথা রাখেননি।

গত ৯ ডিসেম্বর আমীর এজাজ খানকে আহ্বায়ক এবং মনিরুল হাসান বাপ্পীকে সদস্য সচিব করে খুলনা জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত ৫ মার্চ ৬৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কমিটিতে ১৫ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪৮ জনকে সদস্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ নম্বর সদস্য সেলিম সরদার এবং ৫১ নম্বর সদস্য মার্শাল।

কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল সমকালকে বলেন, মামলার বিষয় আদালত ফয়সালা করবে। সামনে আন্দোলন আছে, এজন্য সবাইকে নিয়েই কমিটি করা হয়েছে। মার্শাল যদি আদালতে দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিঠুর পরিবারের অনুরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিটির আগে অনেকে অনেক বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন। দল যেটা ভালো মনে করেছে, সেটাই করেছে।

কমিটিতে মার্শালের নাম থাকায় ক্ষুব্ধ উপজেলা বিএনপির নেতারাও। ফুলতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. গাজী আবদুল হক বলেন, অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র, আমাদের কী করার আছে?

হাসনাত রিজভী মার্শাল সমকালের কাছে দাবি করেন, মারধর করে আমার কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছিল। কারাগারে থাকতেই জবানবন্দি প্রত্যাহার চেয়ে আমি আদালতে আবেদন করি। আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে আমাকে জামিন দেয়। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।

জানা যায়, এ হত্যা মামলায় ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর হাসনাত রিজভী মার্শালসহ আটজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। চার্জশিটে মূল পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের নাম না আসায় আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী ও মিঠুর ছোট ভাই রাজ সরদার।

এই বিভাগের আরও খবর