বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে অর্ধশতাধিক ইসলামী দল।
তবে হাতে গোনা কয়েকটি দলের রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও অন্যগুলোর অবস্থা করুণ। অনেক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিও নেই।
সভাপতি, সম্পাদক ব্যতীত অন্য পদে নেতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এরপরও মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসব ইসলামী দলের বেশ কদর।
প্রধান রাজনৈতিক জোট বা দলগুলো নিজেদেরকে ইসলামপন্থী প্রমাণ করতে এসব রাজনৈতিক দলকে কাছে টানে।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বর্তমানে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ইসলামী দল ১১টি। এসব দলের মধ্যে খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে।
আর ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। এ দলের দু’জন বর্তমানে সংসদ সদস্য।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ।
এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন ও হাফেজ্জি হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
এ দুটি দল ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ প্রকাশ করে বৃহৎ এ জোটে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
অনিবন্ধিত বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (আইডিএ) নামে ১৭টি দলের সমন্বয়ে একটি জোট রয়েছে। এ জোটে ১৩টি অনিবন্ধিত ইসলামী দল রয়েছে।
এ জোটটি মহাজোটের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করতে চায়। যদি কোনো কারণে মহাজোটের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে আইডিএ এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের নেতা ও শরিয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহ বলেন, দুই ভাবেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মহাজোটের সঙ্গে জোটগতভাবে এবং এককভাবে ৩০০ আসনে। তবে এ ক্ষেত্রে এ জোটের শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, তার দল বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে ৩৬টি ইসলামী দল। এর মধ্যে দুটি নিবন্ধিত দল ও ৩৪টি অনিবন্ধিত দল রয়েছে।
এ জোটের ইসলামী দলগুলো জোটের সিদ্ধান্তের আলোকে জোটগতভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে এ জোটের ইসলামী দলগুলোকে কয়টি আসন দেয়া হবে, সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ৩৪ দলীয় জাতীয় ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুক বলেন, আমরা একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। সম্মিলিত জাতীয় জোট মহাজোটের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে ২টি আসন এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে ২৫টি আসন চাইব।
১৪ দলীয় জোটের একমাত্র ইসলামী দল তরিকত ফেডারেশন। এবারও দলটি ১৪ দলের সঙ্গে জোটভাবে অংশগ্রহণ করছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল দুটি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এবারও মহাজোটের কাছ থেকে দুটি আসন পেতে চায় ১৪ দলের এ শরিক দল।
২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে পাঁচটি ইসলামী দল। এসব দলের মধ্যে রয়েছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তক্রমে বিএনপির সঙ্গে এসব দলও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে কোন দল কয়টি আসন পাচ্ছে, সেসব এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আসন বিন্যাসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
ইতিমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি।
দলের আমীর হাফেজ মাওলানা মো. আতাউল্লাহ বলেন, আমরা এককভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। সে লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। দলীয় প্রতীক বটগাছ নিয়েই আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এ দলটিও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সম্পাদক ও আমীরের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একাংশের আমীর মাওলানা জাফরুল্লা খানের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট। অনিবন্ধিত আটটি দলের সমন্বয়ে গঠিত এ জোট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জোটের কো-চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, সম্মিলিত ইসলামী জোটের বর্তমান দল সংখ্যা ৮টি। আরও কয়েকটি দল আমাদের জোটে অংশ নেয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করছে। যদি তারা আসে, তাহলে দল সংখ্যা বাড়বে। নইলে এ দল নিয়েই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ৩০০ আসনেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।