নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে তীব্র যানজটে পড়েছে নগরবাসী।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে শনিবার বিকেলে শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে গিয়ে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা। এই আয়োজনে আটকে যায় অনেক সড়ক।
যেসব এলাকা দিয়ে শোভাযাত্রা যায় সেসব এলাকা ও আশপাশের প্রায় সব রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় এক পাশে শোভাযাত্রা হলেও আরেক পাশের সড়কে যানবহনগুলো থমকে যায়। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
বিকেল ৫টার দিকে নিউমার্কেট থেকে হেঁটে আসা তরিকুল ইসলাম নামের একজনের সঙ্গে কথা হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা উত্তরায়। কিছু কেনাকাটার জন্য দুপুরে নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় দেখি কোনো বাস নেই।
‘অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে গেছি। উপায় না পেয়ে হাঁটা শুরু করেছি, এখন এই পর্যন্ত আসলাম, দেখি আর কতদূরে গেলে কোনো বাস পাওয়া যায় কি না। কিছু বলার নেই ভাই। রাজনীতিবিদরা যদি সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে কর্মসূচি দেয় তাহলে আমরা কই যাই বলেন।’
পান্থপথের মোড়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে বসে থাকা তন্ময় আহম্মেদ বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই এক জায়গায় বসে আছি। কখন সিগন্যাল ছাড়বে তা-ও বলতে পারছি না। শুনলাম সামনে আওয়ামী লীগের মিছিল চলছে, তাই আমাদের এই রাস্তা বন্ধ রাখছে।
‘কথা হলো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকলে মাঠে করুক, রাস্তায় কেন? শুধু শুধু সাধারণ মানুষকে এই ভোগান্তিতে ফেলে তারা কী আনন্দ পায় বুঝি না ভাই।’
শুধু ধানমন্ডি ৩২ অথবা পান্থপথই নয়, এই শোভাযাত্রার কারণে শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার, বিজয়সরণি, মহাখালীসহ রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই যানজট দেখা গেছে।
সোনারগাঁও হোটেলের সামনে লিংকন নামে এক রিকশাযাত্রী বলেন, ‘৩০ মিনিট ধরে এক জায়গায় আছি। পুলিশ এই সিগন্যাল ছাড়ছেই না। কখন ছড়বে তা-ও জানি না।’
কারওয়ান বাজার মোড়ে সিরাজুল আলম নামে আরেকজন বলেন, ‘অফিস শেষে বিকেল ৪টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি আজিমপুর যাব। শুধু আমি না, বাসগুলোও দাঁড়িয়ে। কেউ যেতে পারছি না। আর একটু অপেক্ষা করব তারপর হাঁটা শুরু করব।’
আয়োজকরা জানান, রাজধানী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন এই শোভাযাত্রায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এই কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীর ঢল নামে। ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাল-সবুজের সাজে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে মিছিলের কলেবর। একপর্যায়ে সাড়ে ৪টার দিকে মিছিলের সম্মুখভাগ বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে গিয়ে পৌঁছে। শেষের দিকটি তখনও প্রায় শুরুর অবস্থানেই থেকে যায়।
শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যদের মধ্যে শোভাযাত্রায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচিসহ অন্য অনেক নেতা।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এখানে খোলা ট্রাকের ওপর স্থাপিত মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন নেতারা। নেতা-কর্মীরা নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ঢোল, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র ও বিভিন্ন আকৃতির নৌকা নিয়ে শোভাযাত্রায় আসেন তারা।