আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলী থানাহাজত থেকে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামির ভাই শানু হাওলাদারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানার ওসি আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে বরিশালের ডিআইজি শফিকুল ইসলামের নির্দেশে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন তাকে প্রত্যাহার করেন। তাকে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহারের এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট।
তবে তারা এ জঘন্য ঘটনায় ওসি আবুল বাশারের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পরিবারের অভিযোগ ৩ লাখ টাকা না দেয়ায় দফায় দফায় শানু হাওলাদারকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহত শানু হাওলাদারের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পরে রাত ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মামলা হয়নি। এলাকাবাসী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওসি আবুল বাশারসহ সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ বলেছেন, থানার ভেতর আসামির মৃত্যুর মূল কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অল্প দিনের মধ্যেই তদন্ত শেষ হবে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকেই আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত ৩ নভেম্বর ইব্রাহিম নামের একজনকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলায় শানু হাওলাদারের সৎভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সহেন্দভাজন আসামি হিসেবে আমতলী থানা পুলিশ শানুকে ধরে নিয়ে যায়। পরে থানার ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি আসামির পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওসি আবুল বাশারের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার পরপরই এসপি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব অবহেলার দায়ে এসপি মারুফ থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এদিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে শুক্রবার বিকালে আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, একজন নির্দোষী মানুষকে থানাহাজতে টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করবে- এটা মেনে নেয়া যায় না। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাচ্ছি। নিহত শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারের প্রত্যাহারের খবরের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি। তিনিই টাকা না পেয়ে আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। আমি ঘাতক ওসির দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।