,

শিক্ষক-ছাত্রীর অনৈতিককান্ড; গোঁজামিল তদন্তে ‘ধামাচাপা’!

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম নাঈম সিকদারের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা ধামাচাপা দিতে দায়সারা তদন্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে তদন্ত কমিটি মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে দায়সারা প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ অভিভাবক ও এলাকাবাসীর। তারা পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন ।

জানা গেছে, শিক্ষক এস এম নাঈম শিকদার ও একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর আপত্তিকর একটি ভিডিও গত জুন মাসের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদের নির্দেশে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ৯জুন ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে।

এ ঘটনার পরে শিক্ষক এস এম নাঈম সিকদারের স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক কাশিয়ানী উপজেলার চন্দ্রদীপ গ্রামের খলিলুর রহমান শিকদারের ছেলে।

অপরদিকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদের নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নুর আলমকে প্রধান করে ১৪জুন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল।

এই তদন্ত কমিটি প্রায় ২মাস তদন্ত শেষে গত ৬আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষক এস এম নাঈম সিকদার ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় কে বা কারা একটি ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে ভাইরাল করে দেয়। তদন্ত কমিটি ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে। ওই ছাত্রী ও তার মায়ের লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়। লিখিত বক্তব্যে তারা জানায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষ শিক্ষক ও ছাত্রীকে নিয়ে নানা ধরণের কথা রটাচ্ছে। ওই শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর কোন অনৈতিক সম্পর্ক নেই।

শিক্ষক এস এম নাঈম শিকদারের লিখিত বক্তব্যে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই মেয়েটি দুই বছর আগে শিক্ষক এস এম নাঈমের কাছে প্রাইভেট পড়তো। ওই মেয়ের সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। বর্তমানেও কোন সম্পর্ক নেই। একই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষক এস এম নাঈম সিকদার ২০১৯ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে সহকারী শিক্ষক পদে রামশীল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

ভাইরাল ভিডিও পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাইভেট পড়ানোর এক পর্যায়ে মেয়েটি শিক্ষকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পর মূহূর্তে শিক্ষক নাঈম সিকদার টিনএজার ছাত্রীকে হাত দিয়ে বাঁধা প্রদান করেছে, নাকি উৎসাহিত করেছেন তা ভিডিও চিত্রে স্পষ্ট নয়। ঘটনাটি মেয়ে কেন্দ্রিক একতরফা বলে প্রতীয়মান হয়। শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি সুস্পষ্ট প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে স্বপদে পুর্ণবহাল করার জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে।

তদন্ত কমিটির মনগড়া এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষক এস এম নাঈম শিকদারকে ৬০ দিনের মধ্যে পুর্নবহালের সুপারিশ করা হয়। গত ২৭ আগস্ট প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি গোপনে সভা করে শিক্ষক এস এম নাঈম শিকদারকে পুর্ননিয়োগ দিয়ে স্বপদে বহাল করেছেন। তবে কাগজে-কলমে যোগদানের তারিখ ৮ আগস্ট দেখানো হয়েছে । এ ঘটনায় এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকান্ড ও তাকে স্বপদে পুর্নবহাল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক এস এম নাঈম শিকদার একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাড়ির বসতঘরে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ওই শিক্ষক এবং ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের নিরাপদ ভেবে তাদের কাছে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠাই। তবে সেই শিক্ষকদেরু বিরুদ্ধেই যদি ছাত্রীর সাথে অনৈতিক ও আপত্তিকর কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠে তাহলে আমরা শিক্ষার জন্য কাদের কাছে পাঠাবো? আমি ওই শিক্ষকের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।

ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে শিক্ষক এস এম নাঈম শিকদার বলেন, ‘এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।’

প্রধান শিক্ষক অমল কুমার সরকার বলেন, ঘটনার সত্য-মিথ্যা জানি না। তবে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিক স্যারে নির্দেশে ম্যানেজিং কমিটি সভা করে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে ২৮ আগস্ট তাকে পুর্ননিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিক কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন, লিখিত প্রতিবেদনই আমার বক্তব্য। তবে তিনি অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর