জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা: বরগুনার বামনায় প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সরকারের ভর্তুকিমূল্যে বিতরণকৃত কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় উপজেলার ডিগ্রি কলেজ সড়কে কালোবাজারে বিক্রিকৃত একটি হারভেস্টার মেশিন ট্রাকে তোলার সময় এলাকাবাসী হাতে নাতে আটক করে। পরে বামনা থানায় বিষয়টি জানালে পুলিশ এসে হারভেস্টার মেশিনসহ ট্রাকটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার রামনা ইউনিয়নের জনৈক মো. ফেরদৌসের নামে হারভেস্টার মেশিনটি বরাদ্দ দেয় কৃষি অফিস। মাত্র ৯ লাখ টাকা চুক্তিতে মেশিনটি ক্রয় করেন তিনি। কৃষি অফিস থেকে চাবি সংগ্রহ করে রাতে মেশিনটি চালিয়ে কলেজের সামনে নিয়ে যান তার চালক। পরে সেখান থেকে এটি মেটাল কম্পানির স্টিকারযুক্ত একটি ট্রাকে তোলা হয়। এ সময় স্থানীয়রা ট্রাকটিকে আটক করেন।
ট্রাকচালক বলেন, মেটাল কম্পানির মাসুদ ভাই আমার গাড়ি ভাড়া করেছে। সে আমাকে গাড়িটি কোথায় যাবে সেটি বলেনি। হয়তো ঢাকা বা ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
ওই কম্পানির বরগুনা জেলার টেরিটরি কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, মেশিনটি ঢাকা অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে। ক্রেতা নেবে বলে কথা ছিল, কিন্তু তিনি না নেওয়ায় এটি ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল।
কম্বাইন্ড হারভেস্টারটির ক্রেতা পরিচয় দিয়ে মো. ফেরদৌস বলেন, আমি জায়গা জমি বিক্রি করে মেশিনটি কিনেছি। বামনায় ধান কাটার জায়গা নাই বিধায় মেশিনটি পাবনায় পাঠাচ্ছিলাম। এ সকল ব্যবস্থা আমায় মেটালের মাসুদ ভাই করে দিয়েছে। আমি এটি চুরি করে বিক্রি করছি না।
জানা গেছে, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়তায় কৃষকের মাঝে (ভর্তুকি মূল্যে) কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণের উদ্যোগ নেয় সরকার। দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসাবে বরগুনার বামনায় প্রান্তিক কৃষকের মাঝে প্রতিটি হারভেস্টারে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করেন উপজেলা কৃষি অফিস।
বামনা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুটি স্বনামধন্য হারভেস্টার কম্পানি এসিআই ও মেটাল এই ভর্তুকি মূল্যে হারভেস্টার দিয়ে থাকে। কম্পানি থেকে এটি কিনতে গেলে ৩০ লাখ টাকার বেশি দাম পড়ে। অথচ সরকার ভর্তুকী দিয়ে সেই মেশিন মাত্র ৯-১০ লাখ টাকায় বিতরণ করে। শুধু তাই নয়, মেশিনটি পেতে সহজ কিস্তির সুবিধাও রয়েছে। ২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বামনা উপজেলায় ৯০টির অধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে বামনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।