,

নাঈমের সাজানো ঘরে এখন শুধু শূন্যতা

সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজারের কাছে ফরিদপুর-চরভদ্রাসন সড়ক থেকে পূর্ব দিকে পদ্মা নদীর পাড়ে চলে গেছে একটি মেঠো পথ। সামনে এগোলে নদীর পাড় ঘেঁষে একটি কতবেলগাছের পাশে টিনের চৌচালা ঘর। এটিই নাঈমদের বাড়ি।

উঠানে যেতেই ঘরের ভেতর থেকে আহাজারির শব্দ কানে আসে। ঘরের মেঝেতে শুয়ে কাঁদছিলেন নাঈমের মা নাজমা বেগম (৪৮)। মাঝেমধ্যে বলছিলেন, ‘ওরে বাজান, আমার বাজান চইলা গেল রে। আমার বাজানরে আইনা দে।’

উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিল নাঈম। তার বড় ভাই নাজমুল শেখ (২২) ফরিদপুরের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স স্কুল থেকে মেডিকেল ডিপ্লোমা পাস করে বর্তমানে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নি করছেন। বোন লামিয়া আক্তার (২০) বিবাহিত। স্নাতক পড়ছেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে ভূগোল বিষয়ে।

ঘরের ভেতরটা সাজানো টিস্যু পেপার, শপিং ব্যাগ, কাগজ দিয়ে বানানো ফুলসহ নানা জিনিস দিয়ে। অবসরে এসব তৈরি করত নাঈম। বাড়িতে কবুতর, বিড়াল পুষত। উঠানের কতবেলগাছটাও নাঈমের লাগানো। এক বছর আগে পাশের গজারিয়া হাট থেকে ১২০ টাকা দিয়ে কিনে এনে গাছটি লাগিয়েছিল। গোয়ালঘরের পাশে নয়নতারা ফুল আর একটি পেয়ারাগাছও লাগিয়েছিল কয়েক দিন আগে।

নাঈমের বাবা শেখ সেকেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনলাম, আমার ছেলে অ্যাকসিডেন্ট করেছে। সবার কাছে জানতে চাইলাম, ও কোথায় আছে। সবাই বলে হাসপাতালে আছে। তখনই আমি বুঝে যাই, আমার ছেলে আর বাঁইচা নাই। বাঁইচা থাকলে তার তো হাসপাতালে থাকার কথা।’

গতকাল রাতে সাদীপুর শান্তিবাগ কবরস্থানে দাফন করা হয় নাঈমকে। তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, নাঈম অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র ছিল। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়েছে।

ট্রাক্টরচালক কারাগারে
নাঈমকে চাপা দেওয়া ট্রাক্টরচালক রফিকুল ইসলামের (২৮) কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, এ ঘটনায় নাঈমের বাবা বাদী হয়ে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে থানায় মামলা করলে পুলিশ রফিকুলকে গ্রেপ্তার করে। আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, মাটিবাহী ট্রাক্টর একটি অবৈধ যান। এ জাতীয় যান লাইসেন্সবিহীন।

এই বিভাগের আরও খবর


Antalya korsan taksiAntalya korsan taksi