,

অসুস্থ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিশাহারা বৃদ্ধ বাবা-মা

জেলা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: বৃদ্ধ সমেজ উদ্দিন ও সাহেদা বেগমের ঘর আলোকিত করেছিল পিন্টু, ডলি, নাসরিন ও সাহাদত নামের চার সন্তান। এদের মধ্যে বড় ছেলে পিন্টুর জন্ম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। জন্মের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পিন্টু। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সমস্যাও বাড়তে থাকে তার।

জন্মের পর পিন্টুকে দুই বছর বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা করানো হয়। দরিদ্র পিতা-মাতা টাকার অভাবে এরপর তার আর কোনো চিকিৎসা করাতে পারেননি। অন্যদিকে জন্মের তিন বছর পর থেকেই নাসরিন আক্তারও একই রোগে আক্রান্ত হন।

বর্তমানে তারা ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না। ভাত খাওয়ার সময় গলায় আটকে পড়ছে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ভাত খেতে হচ্ছে। পিন্টুর গলার সমস্যার সঙ্গে এখন চোখেও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাঁ চোখ বাইরের দিকে বেরিয়ে এসেছে। প্রতিনিয়ত চোখ থেকে পানি ঝরছে। অসুস্থ ছেলে-মেয়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে তাদের এমন অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা-মা এখন দিশাহারা। বৃদ্ধ বয়সে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে যা পান তা দিয়ে সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন পিতা সমেজ উদ্দিন।

প্রাথমিকভাবে তাদের দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, থাইরয়েড বা গলগণ্ড রোগ থেকে এ সমস্যা হয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

দুই ভাই-বোনের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের পাকুল্যা পূর্বপাড়া গ্রামে। সন্তানদের অসহায়ত্বে দিশাহারা বৃদ্ধ বাবা সমেজ উদ্দিন জানান, ‘টাকার অভাবে অনেক আগেই দুই সন্তানের চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছি। ছেলের গলার সমস্যার সঙ্গে এখন চোখেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যথার যন্ত্রণায় প্রতিদিন অস্থির হয়ে ওঠে পিন্টু। ‘

তিনি জানান, ‘১৯৮৭ সালে তিনি পরিবার নিয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের কুকুরিয়ার চরে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। তাদের সেই বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হলে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ২০১৬ সালে মির্জাপুরের নিজ গ্রাম পাকুল্যাতে চলে আসেন। ডলি নামের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট ছেলে সাহাদত বিয়ে করে আলাদা সংসার করেন। বয়স বাড়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না সমেজ উদ্দিন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে তাদের সংসার চলছে এখন। ’

মা সাহেদা বেগম জানান, ‘জন্মের পর পিন্টুর গলা রক্তবর্ণ থাকত। পরে হোমিও ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ খাইয়েছি। এরপর দিন দিন গলায় শক্ত দলাকৃতি হয়ে যায়। আস্তে আস্তে তা বড় হতে থাকে। নাসরিন সুস্থভাবে জন্ম নিলেও তিন বছর পর তার গলায়ও পিন্টুর মতো একইভাবে চিহ্ন দেখা দেয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও দেশের ধনী ব্যক্তিদের কাছে আমাদের ছেলে-মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাই। ‘

পাকুল্যা গ্রামের রিপন চৌধুরী জানান, দেশ ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা তাদের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারেন। দুই ভাই-বোনের চিকিৎসার জন্য তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে থাইরয়েড বা গলগণ্ড রোগ থেকে এ সমস্যা হয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নাক, কান, গলা, এন্ডোক্রাইনোলজিস, মেডিসিন ও সার্জারি সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করাতে হবে। তাদের বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। এসব চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও দেশেই সম্ভব। ‘

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা করা যেতে পারে। ‘

চিকিৎসা সহায়তায় অর্থ পাঠাতে- তাদের বৃদ্ধ বাবা সমেজ উদ্দিনের বিকাশ নম্বর : ০১৯৮৩০৭৪৯৭৩, পিন্টু মিয়া সঞ্চয় হিসাব নম্বর ৬০০১২০১০০৯৯১৯ সোনালী ব্যাংক পাকুল্যা শাখা, মির্জাপুর।

এই বিভাগের আরও খবর


Antalya korsan taksiAntalya korsan taksi