,

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ৬৯তম জন্মদিন আজ

বিডিনিউজ ১০ ডটকমরাজনৈতিক মাঠে সততা নিষ্ঠা আদর্শের উজ্জলতার প্রতিচ্ছবির নাম ভাটির জেলা কিশোরগঞ্জের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

বাংলার স্বাধীনতার অনতম সংগঠক, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের জৈষ্ঠপুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বছরের প্রথম দিনে ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈতৃক নিবাস তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহাকুমায়।

ময়মনসিংহ শহরেই ফুটেছে আশরাফের শৈশবের ফুল। বাবা সৈয়দ নজরুলের রাজনৈতিক পদচারণ দেখতে দেখতেই রাজনীতির হাতে করি হয় সৈয়দ আশরাফের। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুন টকবগে সৈয়দ আশরাফ দেশের জন্য অস্ত্র তুলে নেন। ৭৫’র ভয়াল ১৫ই আগষ্ট! মুসতাক ও তার দলবলেরা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য জাতীয় চার নেতাকে তাদের মন্ত্রী পরিষদে যুক্ত করতে বারংবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

ভাগে না পেয়ে ২৩শে আগষ্ট জাতীয় চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে ৭২ দিন অন্ধকার জেলখানার প্রকোষ্ঠে কারারুদ্ধ করে রেখে অবশেষে ৩রা নভেম্বর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালা।

জেলে বাবা খুন হবার পর সৈয়দ আশরাফকে লন্ডনে নির্বাসিত হতে হয়েছিল। দেশ তাকে বার বার পিছু ডাক ছিল। মনের কোনে উঁকি দিচ্ছিল নরসুন্দার পাড়ের কলতান। কিন্তু সময় অনুকূলে ছিল না, নানা চাপে ছিল না দেশে ফেরার সুযোগ।

লন্ডনেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। লন্ডন কমিনিউটি যুবলীগের সদস্যও ছিলেন। ১৯৯৬ সালের কিশোরগঞ্জের আবেগ ভালবাসা ভরসার প্রতিক হয়ে সৈয়দ আশরাফ ফিরে আসেন তার প্রিয় নরসুন্দার তীরে গড়ে উঠা শহরে। আস্থার ঠিকানা খুঁজে পেয়ে, অভিভাবক পেয়ে ঢালাও সমর্থনে সানন্দে সৈয়দ আশরাফকে গ্রহন করে কিশোরগঞ্জ বাসিন্দারা।

৯৬ সাল থেকে পাঁচবার জাতীয় সাংসদ নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ধীরে ধীরে তার জাত চিনিয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সততা আর আদর্শে মোড়ানো এ নেতা আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে দলের দূত হয়ে আবির্ভূত হন।

২০০৬ সাল। শুরু হয় ধরপাকড়। ওয়ান এলিভেনে সারাদেশে গুঞ্জন উঠে ষড়যন্ত্র চলছে মাইনাস টু ফরমুলা বাস্তবায়নের। আওয়ামী লীগের অনেক নামী দামী ওজনদার নেতারা সংস্কারের সাথে আপোষ করে নিচ্ছিল, আখের গুচিয়ে রাজনীতি ছেড়ে অনেকেই বিদেশ পাড়ি জমাতে দৃঢ় হয়ে উঠে। সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ।

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগকে অভিভাবক শূন্য করার ষড়যন্ত্রের রুখে দাড়ান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়ে চষে বেড়ান ৫৬ হাজার বর্গ মাইল। জনমত গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সতীর্থ ছিল বাবা সৈয়দ নজরুল। আর নতুন রুপে বাংলাদেশ গড়ার যুদ্ধে শেখ হাসিনার সহযোদ্ধা হয়ে উঠে সৈয়দ আশরাফ।

২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতের সাম্প্রদায়িক আন্দোলন যখন স্বাধীনতার মূল স্তম্ভে আঘাত হানার চেষ্টা করে তখন সৈয়দ আশরাফের ভুমিকা দেশ বিদেশ প্রশংসিত হয়েছিল।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের সৌন্দর্য ধরে রাখার প্রত্যয়ে ডেপের চেয়ারম্যান সৈয়দ আশরাফের স্লোগান ছিল জলাশয় রক্ষা। নরসুন্দা নদী খননের মধ্য দিয়ে সৌন্দর্য্য মন্ডিত লেক সিটি গড়ে তোলা হয় কিশোরগঞ্জে।

ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সৈয়দ আশরাফ একজনই যিনি টানা দ্বিতীয় বার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছিলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটক প্রতিমন্ত্রী। দুই মেয়াদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পালনে ছিলেন উদাহরণ স্বরূপ।

সৈয়দ আশরাফ ৯৯১ কিলোমিটারের কিশোরগঞ্জ ছাড়িয়ে ৫৬ বর্গমাইল জুড়ে দল মত নির্বিশপষে সব শ্রেণী মানুষের কাছে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। সততা আদর্শ আর নিষ্ঠার জন্য সৈয়দ আশরাফ দল মত নির্বিশেষে সারা বাংলার মানুষের কাছে একটি অনুভুতির নামে রুপ ধারন করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর