,

সারা দেশে দেওয়া হচ্ছে করোনাটিকা

বিডিনিউজ ১০ ডটকম: রাজধানীসহ সারা দেশে করোনা টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে একযোগে করোনার টিকার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগে করোনার টিকা নিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

রাজশাহী: সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

রাজশাহীতে প্রথম করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।

রোববার সকাল ১০টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে তিনি করোনার টিকা নেন।

এ সময় তিনি বলেন, এ ভ্যাকসিন আমার কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে। কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব করিনি। ভ্যাকসিন নেয়ার পর কোনোরকম অস্বাভাবিকও মনে হয়নি। তাই ভয় না পেয়ে সবার প্রতি আমি আহ্বান জানাব- ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন। করোনাকে পরাজিত করে সুস্থ থাকুন।

এমপি বাদশার টিকা নেয়ার পর তার সহধর্মিণী অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস এবং সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার করোনার টিকা গ্রহণ করেন।

এরপর রামেক হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিতে শুরু করেন।

রাজশাহী শহরে মোট তিনটি কেন্দ্রে রোববার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অন্য দুটি কেন্দ্র হলো- বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল।

দুপুর ১২টায় পুলিশ হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার জানান, রাজশাহীতে উপজেলা পর্যায়ে ১০টি কেন্দ্রে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৯ উপজেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।

এর বাইরে গোদাগাড়ী উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা বিশেষায়িত হাসপাতালে টিকা দেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, প্রথম দিন টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কম থাকার কারণে সীমিত আকারে বুথ আছে। তবে পর্যায়ক্রমে চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুথের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

প্রথম ধাপে রাজশাহীর ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব। আপাতত যারা অ্যাপে নাম নিবন্ধন করেছিলেন তাদের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে ১৫টি ক্যাটাগরির নাগরিকদের টিকা দেয়া হচ্ছে।

সিলেট: সিলেটে সম্মুখযোদ্ধাদের টিকাদানের মধ্য দিয়ে রোববার করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্মুখসারির যোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিকা নিতে উপস্থিত হন।

এছাড়াও পুলিশ লাইনে করোনার টিকা নেন সিলেট পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

সিলেটে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি।

এরপর টিকা নেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক শিশির চক্রবর্তী, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব, সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল, সিলেট ওসমানী মেডিকেলের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. শাহবুদ্দিন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আজিজুর রহমান রোমান ও হাসপাতালের সেবিকা রাখি রানী সাহাসহ অনেকে।

টিকাদানকালে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী উপস্থিত থাকলেও টিকা নেননি। তিনি সাংবাদিকদের জানান, শারীরিক সমস্যার কারণে এ মুহূর্তে টিকা নিচ্ছেন না, পরে নেবেন।

টিকা নিয়ে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল-আজাদ বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে দেশে যারা কুৎসা রটিয়েছিলেন, গুজব সৃষ্টি করে তা রটিয়েছিলেন; এটা আজ ভুল প্রমাণিত হলো।

একইভাবে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের দিক দিয়ে বাংলাদেশ মাত্র কয়েকটি দেশের মধ্যে এগিয়ে থাকায় আমরা অত্যন্ত খুশি। টিকায় ভয়ের কোনো কারণ নেই।

স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, সিলেট বিভাগে এক মাসে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৮ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে সিলেটে এক লাখ ১৫ হাজার ৪৭টি ভ্যাকসিনের চাহিদা ছাড়াও সুনামগঞ্জে ৯০ হাজার, হবিগঞ্জে ৩৫ হাজার ৪১টি এবং মৌলভীবাজারে ২৮ হাজার টিকার চাহিদা রয়েছে।

পর্যায়ক্রমে এ চাহিদা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি বুথে ১২টি টিমের মাধ্যমে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে।

এখানে দৈনিক এক হাজার ২শ’ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া পুলিশ লাইনস হাসপাতালে একটি বুথে থাকবে একটি টিম। প্রতিটি টিমে স্বেচ্ছাসেবক, সেবিকা ও চিকিৎসক থাকছেন।

বরিশাল: প্রথম ভ্যাকসিন শরীরে প্রয়োগ করে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না আমিন বরিশাল বিভাগের এবং শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বরিশাল মহানগরীতে মহামারি করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রমের সূচনা করেছেন।

বরিশালের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোববার থেকে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আয়োজনে টিকা দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুপুর ১২টায় বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে প্রথম টিকা নেন নাসরিন জাহান রত্না আমিন এমপি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বরিশাল মহানগরে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১০টায় শেবাচিম হাসপাতালে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেনের শরীরে প্রথম ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দিনাজপুর : দিনাজপুর জেলায় প্রথম দিনে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ৭১৭ জন। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন নিয়ে জেলা পর্যায়ে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, প্রথম দিন রোববার জেলার ১৪টি কেন্দ্রে ৭১৭ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করে। এর মধ্যে ৫৭৪ জন পুরুষ এবং ১৪৩ জন মহিলা। তিনি জানান, ১৪টি কেন্দ্রে মোট ৩৮টি টিম কাজ করে। প্রতিটি টিমে ২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ প্রশিক্ষিত মোট ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন প্রয়োগের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

পাইকগাছা (খুলনা) : খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকালে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দীকি ও উপজেলা স্বাস্থ ও প.প. কর্মকর্তা নীতিশ চন্দ্র গোলদার। এ সময় আরও  টিকা নেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা ও রুনু।

চাটখিল (নোয়াখালী) : নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহিম রোববার সকাল ১১টায় চাটখিল সরকারি হাসপাতালে প্রথম করোনার টিকা নিয়ে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্সসহ ২০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম করোনার টিকা গ্রহণ করেন মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীর। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবীব জানান. পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ ২০ জনকে রোববার টিকা প্রদান করা হয়। টিকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন। বক্তব্য রাখেন মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীর, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন মন্ডল প্রমুখ।

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট): উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী, শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, মুক্তিযোদ্ধাদের করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মজিদ মোল্লা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. লায়লা আঞ্জুমান, ডা. জোবায়ের আল ফয়সাল, ডা. আনোয়ার গালিব, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আজাহার আলী, মোফাজ্জল হোসেন, ক্ষেতলাল ডায়াবেটিক সমিতির কো-অর্ডিনেটর  আজিজুল হক প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর