,

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি বন্ধুতা বাড়ায়?

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি : ফেসবুকে আপনার মোট বন্ধুসংখ্যা কতো? হাজার, দুই হাজার, নাকি আরও বেশি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমাদের বন্ধুসংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, ফোনের স্পিড ডায়ালে কিন্তু মাত্র কয়েকটি মানুষকেই রাখি আমরা। কিন্তু কেন? চারপাশে আর হাতের মুঠোয় এতো বন্ধু থাকলেও আমাদের বাস্তব জগতের বন্ধু সংখ্যা কি আসলেই বেড়েছে?

সম্প্রতি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুর সংখ্যা বাড়লেও আমাদের নিজেদের ভেতরে বন্ধু তৈরি করার ক্ষমতা আদতে একেবারেই বাড়ে না।

আর এর মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে মানুষের নিজস্ব প্রকৃতি। মানুষ অন্য কেউ কেমন আছে জানতে চায়। কিন্তু তার সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে চায় না। এই যেমন- আপনি হয়তো আপনার কলেজের কোনো এক ক্লাসমেটকে ফেসুবকে যোগ করেছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে বা বন্ধুত্ব করতে চান। আপনি শুধু সে এখন কোথায় থাকে, কোথায় কাজ করে এই ব্যাপারগুলো জানতেই বেশি আগ্রহী। বন্ধুত্বের প্রসঙ্গটা এখানে উহ্য থাকে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে বেশিরভাগ ব্যক্তির বন্ধু সংখ্যা কম হয়, পরিচিতের সংখ্যা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় শতকরা ৮ শতাংশ বেশি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মেও এই ব্যাপারে ভিন্নতা দেখা যায়। বর্তমানে জীবিত আছেন এমন একটা প্রজন্মের চিন্তাধারা ছিল সরাসরি বন্ধুত্ব তৈরিতে। মাঝবয়সীরাও এর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বাকিরা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ফেসবুকের মতো স্থানগুলোর দ্বারা খুব বেশি নির্ভর না করলেও এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিশোর-কিশোরী এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে।

শুরু থেকেই প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্ধু বেছে নেওয়ার প্রবণতা থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের একদল তরুণ-তরুণীর ওপর গবেষণা করে জানা যায় যে, তাদের মতে বন্ধুদের জীবন ও প্রতিদিনের সব খবর পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।

এসব বাদেও আরেকটি ব্যাপার খেয়াল করেন গবেষকেরা। আর সেটা হলো, দুজন বন্ধুর কোনো একজন অন্য কোনো শহরে চলে গেলে তাদের মধ্যকার যোগাযোগ ও বন্ধুত্বের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে আসে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুরনো মানুষের স্থান নতুন কেউ নিয়ে নেয়। কিন্তু তার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে বলেই বন্ধুত্ব টিকে থাকছে বা বন্ধুত্বের উপরে এর খুব একটা প্রভাব রয়েছে।

মানুষের মানসিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া সে চারপাশের পরিবেশ দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই সীমাবদ্ধতাকে দূর করতে পারে না। দূরত্ব এবং অন্যান্য প্রভাবকের কারণে বন্ধুর পরিমাণ কমে বাড়ে। বেশিরভাগ সময়ে মানুষ বদলে গেলেও একজন মানুষের বন্ধুর পরিমাণ অনেকটা এক থাকে।

ফেসবুক, লিংকড ইন বা টুইটার তাহলে আমাদের বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে বা মানসিকভাবে বন্ধু তৈরির ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে কি? বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল এখানে সাংঘর্ষিক। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উত্তর- না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একজন মানুষকে কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার রাস্তা তৈরি করে দিতে পারে। তবে এতে করে সেই মানুষটির বন্ধুসংখ্যা বাড়ে না।

সূত্র- এভরিডেহেলথ

এই বিভাগের আরও খবর