,

শীতের রুক্ষতায় রঙিন ফুলের সতেজতা

মো. রাকিবুল হাসান তামিম: প্রকৃতিতে শীতের বিদায়ী ঘণ্টা বাজছে। হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতিতে বিরাজ করা রুক্ষতা আর গাছ থেকে ঝরে পড়া পুরনো পাতা যেন মানুষের মনে এক অদ্ভুত শূন্যতার বিস্তার ঘটিয়েছে।

এই বিশাল শূন্যতা আর রুক্ষতার মাঝেও ভালোবাসা আর সৌন্দর্যের মায়ায় জড়িয়ে রুক্ষ প্রকৃতিতে সতেজতা দিয়ে ভরে তুলেছে শীতের লাল, নীল সহ বাহারি রঙের সব ফুলেরা। নানা জাতের আর নানা বর্ণের এসব দেশি-বিদেশি ফুলের দেখা মিলছে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজে। কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনের বাগানে মুক্ত আকাশের পানে মুখ তুলে নিজের সকল সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে শীতের গাঁদা ফুল, নানান রঙের ডালিয়া, ফুলের রাণী গোলাপ, সেলভিয়া, ডেন্টাস, শিউলি সহ নাম জানা অজানা অসংখ্য ফুল।

ফুল পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার! তাইতো এসব ফুলের সৌন্দর্যের মায়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা দর্শনার্থীরা বিমোহিত হয়েছেন। বাগানের সামনে দিয়ে যারা যাচ্ছেন ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়েছেন ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে।

ফুলের ভালোবাসা আরেকটু কাছে থেকে উপভোগ করতে দৃষ্টিনন্দন এসব ফুলের অদৃশ্য হাতছানিতে অদ্ভুত এক মায়ার মোহনজাল আবৃত হয়ে বাগানে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে ফুলের রাণী গোলাপের সঙ্গে। সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ আর গোলাপি রঙের গোলাপের সমারোহে সমৃদ্ধ বাগান দেখে মনে হতেই পারে ফুটন্ত গোলাপেরা মুখ টিপে হাসছে। মৃদু বাতাসের তোড়ে কাণ্ডটা নড়ে উঠতেই মনে হবে এবার মুচকি হাসিটা যেন অট্টহাসিতে পরিণত হয়েছে।

নিঃশব্দের হাসির ঢেউ হৃদয়ে আঘাত হানতেই চোখ পড়বে লাল, নীল, হলুদ আর সবুজ রঙের ফুটন্ত ডালিয়া ফুলে। শীতকালীন মৌসুমি ফুলের মধ্যে ডালিয়াই সর্ববৃহৎ আকার ও আকর্ষণীয় রঙের ফুল। তাই এটি সবার কাছেই বেশ সমাদৃত। বাহারি রঙ, বর্ণ-বৈচিত্র্য, বড়-বড় পাপড়ি, দৃষ্টিনন্দন বিন্যাস আর বৃহৎ আকৃতির জন্য এটি বেশ বাজিমাত করেছে।

ডালিয়ার পাশেই হেসে কুটিকুটি হলদে রাঙা গাঁদা ফুলেরা। ফুটন্ত ফুলের উপর যখন সূর্যের আলো পড়ছিল সেই আলো বিচ্ছুরিত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্যের আশীর্বাদ নিতে নিতেই দেখা মিলবে শীতকালীন আরেক ফুল রেড সেলভিয়ার সঙ্গে। টকটকে লাল রঙের ফুলের বাহার থেকেই এ নামকরণ।

শুধু এখানেই শেষ নয়, ঢাকা কলেজর বাগানে আরও দেখা মিলবে ডেন্টাস ফুলের বৃত্তাকার বেদী। রয়েছে শিউলি, বকুল সহ দেশীয় ফুলের বিপুল সমাহার।

বাগানে ঘুরে ঘুরে এসব বাহারি রঙের ফুল দেখছিলেন উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান। জানালেন, ফুলের প্রতি তার অসম্ভব ভালোবাসার কথা। বললেন, ‘শীতের রুক্ষমূর্তি সময়ের মাঝেও শেষ সময়ে যখন এতসব ফুল ফোটে তখন খুব ভালো লাগে।’

সম্মান শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী আন্দালিব হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভালোবাসার স্থান হলো ফুলের বাগান। কখনো যদি মন খারাপ থাকে তবে এত এত ফুলের মাঝে যখনি আসি তখনই এক নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়।’

সবকিছু ছাপিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবাইকেই এই বাগানের সামনে দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় সৌন্দর্যের মায়ায় একনজর হলেও থমকে তাকাতেই হয়। কেননা সৃষ্টিগতভাবেই ফুলের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের অমোঘ বন্ধন। তাই ফুলের জাদুকরী বৈশিষ্ট্য মানুষকে সহসাই কাছে টানে।

এই বিভাগের আরও খবর