,

শিশুদের সামনে আর নয় মন্দ কথা!

লাইফস্টাইল ডেস্ক: অন্যকে নিয়ে শোনা নেতিবাচক কথা থেকে শিশুরাও নেতিবাচক মতামত তৈরী করতে শেখে। ‘চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

কোন নির্দিষ্ট দল, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সম্পর্কে যখন শিশুদের সামনে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, শিশুদের মনেও তখন তাদের নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠে। বুধবার ‘চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

৪ থেকে ৯ বছরের ১২১ জন শিশুকে বিভিন্ন ছোট ছোট দলে ভাগ করা হয়। এরপর তাদের দু’জন কাল্পনিক ব্যক্তি বা প্রজাতি সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য শোনানো হয়। এই সমীক্ষার জন্য সে ব্যক্তিদের নাম দেয়া হয়-ফ্লার্পস এবং গিয়ারুজ।

প্রথমে শিশুদের একটি রুমে নিয়ে বিভিন্ন খেলা এবং কাজে ব্যস্ত রাখা হয়। সাথে পূর্বেই রেকর্ডকৃত ভিডিও কলে চলছিল ফ্লার্পস এবং গিয়ারুজকে নিয়ে অন্য দুজন মানুষের কথোপকথন। ফলে শিশুরা নিজেদের কাজ করতে করতেই পরোক্ষভাবে এসব শুনছিল।

আবার কয়েকটি দলকে এসব কথোপকথনের বাইরে রাখা হয়, অর্থাৎ তাদের কাউকে নিয়ে  কোন মন্দ কথা শোনানো হয়নি!

পরে কয়েকজন শিশুকে বলতে শোনা যায়, ” ফ্লার্পস আর গিয়ারুজ খুব খারাপ লোক। তারা বাজে খাবার খায় এবং জঘন্য পোশাক পরে। তাদের কথাবার্তাও অদ্ভুত”।

এসব শিশুর ভেতর যাদের বয়স ৭ বা তার ঊর্ধ্বে তারা, যারা সে পরোক্ষ ও কাল্পনিক কথোপকথন শোনে নি, তাদের চাইতে অধিক নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছিল।

এমনকি ঘটনার দুই সপ্তাহ পর যখন তাদের একটা সাক্ষাৎকার নেয়া হলো তখনও তারা সেই বিশেষ দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ করেছে। সিএনএনকে এ কথা জানান, সমীক্ষাটির একজন পরিচালনাকারী, ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি ইন ন্যাশভিলের মনোবিজ্ঞান ও মানব উন্নয়ন বিভাগের ডক্টরাল প্রার্থী এমিলি কনডর।

শিশুদের স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো মানুষকে বিভিন্ন ছকে ফেলা। এমিলি বলেন, এই বয়সে শিশুরা গায়ের রঙ, পোশাক আশাক বা চারপাশের বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাবিত হয়ে মানুষের আলাদা আলাদা ভাগ তৈরী করে। আর এটাই তাদের সহজাত প্রবৃত্তি।

তবে সব শিশু একইরকম প্রভাবিত হয় না

সমীক্ষায় অংশ নেয়া ক্ষুদে শিশুদের সবার ওপর একইভাবে প্রভাব ফেলেনি সেই কথোপকথন। বিশেষ করে ৪-৫ বছরের শিশুদের মধ্যে ফ্লার্পস বা গিয়ারুজের বিরুদ্ধে মন্দ কথা শুনিয়েও তেমন পরিবর্তন চোখে পড়েনি। তারা কাউকে নিয়ে কোন নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেনি।

নির্দিষ্ট করে ঠিক এ বয়সের বাচ্চারাই কেন সেভাবে প্রভাবিত হয়নি, তার উত্তর জানা নেই এমিলি কনডরের। তবে তার ধারণা, এর জন্য দায়ী শিশুদের মনোযোগহীনতা। ৪-৫ বছরের শিশুরা স্বভাবতই ছটফটে প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলে এই শিশুরা অন্যদের কাছ থেকে কিছু শোনার মত ধৈর্য্য নেই এবং তারা দীর্ঘ সময় মনোযোগও ধরে রাখতে পারে না।

কনডর আরও অবাক হয়ে জানান, বার্তাটি কে তুলে ধরছে সেটি শিশুরা একেবারেই গায়ে মাখে না।

এর আগে ভাবা হয়েছিল, শিশুরা অন্য শিশুদের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়ে থকে। কিন্তু আদতে তারা সব বয়সের, সবার বার্তা একইভাবে গ্রহণের প্রবণতা রাখে।

সমীক্ষাটির সাথে জড়িত ছিলেন না এমন একজন,  আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের চীফ ডাইভারসিটি অফিসার মেয়সা আকবর একই সুরে সিএনএনকে বলেন, বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় শিশুরা যাই শোনে তা থেকে সহজেই প্রভাবিত হয়।

তিনি বলেন, ‘শিশুরা যখন কোনও গোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য শুনতে পায়, তখন তারা সেই গোষ্ঠীটিকে আলাদা হিসেবে ভাবতে শুরু করতে পারে এবং এদের সাথে পরবর্তীতে যুক্ত হতে চায় না’।

শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের ভূমিকা

মেয়সা আকবর বলেন, ‘আপনার বাচ্চাদের সামনে আপনি কী ধরনের তথ্য উপস্থাপন করছেন, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি পরোক্ষভাবে কিছু বলার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন’।

তবে মেয়সা এই সমীক্ষার ফলাফলের ইতিবাচক দিকের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। যেহেতু , বাচ্চাদের প্রভাবিত হবার প্রবণতা প্রকট, সুতরাং অভিভাবকদের উচিত শিশুদের সুসঙ্গ এবং অভ্যাস গঠনে এই প্রভাবকে কাজে লাগানো।

শিশুরা যেন পক্ষপাতী না হয়ে ওঠে, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে বলেন তিনি অভিভাবকদের। খেলনা কেনা থেকে বন্ধু নির্বাচন-সব কিছুতেই বৈচিত্র্য গ্রহণের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে শিশুদের।

আকবর বলেন, “আমরা যত দ্রুত আমাদের শিশুদের কাছে পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা তুলে ধরতে পারব, ততই তারা পক্ষপাতহীনতা ভুলে বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করতে শিখবে”।

সূত্র- সিএনএন 

এই বিভাগের আরও খবর