,

যে ১০ উপায়ে মুমিন বরকত লাভ করে

ইসলাম ডেস্ক: বরকত শব্দটি আমাদের খুবই পরিচিত। বরকত বলা হয় আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অল্পতে অধিক হওয়া। ঘরে-বাইরে, কাজে-কর্মে, এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের কামনা থাকে এই বরকত। প্রিয় নবীজি (সা.)-ও অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্য বরকত লাভের দোয়া করেছেন, পাশাপাশি উম্মতকেও প্রতিটি কাজে বরকত লাভের বিভিন্ন উপায় শিখিয়েছেন। আজকের লেখায় কোরআন ও হাদিসে উল্লিখিত ১০টি বরকত লাভের উপায় তুলে ধরা হলো।

আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা : আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখাকে তাওয়াক্কুল বলে। এর দ্বারাও জীবনের পেরেশানি দূর হয়। কাজেকর্মে বরকত লাভ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর ওপর ভরসা করতে, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদের পাখির মতো রিজিক দান করতেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে (বাসা থেকে) বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলা উদর পূর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৬৪)

যেকোনো ভালো বিষয়ে ইস্তিখারা করা : ইস্তিখারা বলা হয় নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে কোনো বিষয়ের কল্যাণ চাওয়া। এর মাধ্যমেও বরকত অর্জিত হয়। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ সালামি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবাদের সব কাজে এভাবে ইস্তিখারার শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ৭৩৯০)

আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারি অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নিয়ামত উন্মুক্ত করে দিতাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)

নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ লক্ষ করে এবং বুদ্ধিমানরা যেন তা অনুধাবন করে।’ (সুরা : সদ,  আয়াত : ২৯)

অর্থাৎ একনিষ্ঠতার সঙ্গে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করলে সব কাজে বরকত হয়। তাই বরকত লাভে কোরআন তিলাওয়াতের বিকল্প নেই।

দোয়ার মাধ্যমে বরকত লাভ : সুলাইম গোত্রের আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার পিতার ঘরে এলে তিনি তাঁর সামনে খাদ্য পরিবেশন করলেন। তিনি ‘হাইস’ নামক খাবারের উল্লেখ করলে তা তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলো। অতঃপর তিনি শরবত আনেন এবং নবী (সা.) তা পান করলেন। তারপর ডান দিক থেকে  পরিবেশন করা হলো। তিনি খেজুর খেলেন এবং বিচিগুলো তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলের পেটের ওপর রাখলেন। যখন তিনি বিদায় নিতে উঠলেন, আমার পিতাও দাঁড়ালেন। তিনি তাঁর জন্তুযানের লাগাম ধরে বলেন, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করুন। তিনি দোয়া করলেন : ‘হে আল্লাহ! তাদের দেওয়া রিজিকে বরকত দিন, তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭২৯)

লোভ পরিত্যাগ করা : বরকত লাভের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হচ্ছে, অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে লোভ পরিত্যাগ করা। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত লাভ করতে পারে। এই মর্মে হাকিম ইবনু হিজাম (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে আবার দিলেন, তৃতীয়বার চাইলাম, বরাবরের মতো এবারও তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বলেন, হে হাকিম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ব্যতীত) তা গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মতো, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৭২)

ব্যবসায় সত্য বলা : সৎভাবে ব্যবসা করা ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদত। যারা ব্যবসায় সততা বজায় রাখে, মহান আল্লাহ তাদের বরকত দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)

ভোর-সকালে কাজ শুরু করা : রাতের বিশ্রাম শেষে ভোর সকালে মানুষের দেহ-মন সতেজ থাকে, উদ্যমতা থাকে। তা ছাড়া এ সময় কাজে বরকত লাভের কথা হাদিস শরিফেও এসেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তা ছাড়া তিনি যখন কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করতেন, তখন দিনের প্রথম ভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথম ভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারীও হয়েছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০৬)

পড়ে যাওয়া খাবার উঠিয়ে খাওয়া : আনাস (রা.) প্রিয় নবীর খাবার খাওয়ার সময়ের অবস্থা তুলে ধরে বলেন, নবী (সা.) খাওয়ার পর তাঁর তিনটি আঙুল চাটতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারো খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তার ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে রেখো না। (বর্ণনাকারী বলেন) আমাদের তিনি থালাও চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে তা তোমাদের জানা নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮০৩)

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখলে আল্লাহ তাআলা জীবনে ও রিজিকে বরকত দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)

মহান আল্লাহ আমাদের এসব গুণ অর্জন করে সর্বক্ষেত্রে বরকত লাভের তাওফিক দান করুন।

এই বিভাগের আরও খবর