,

যমুনায় বিলীন চৌহালীর আশিভাগ মানচিত্র

সিরাজগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চৌহলী।

চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : বিগত দু’দশক ধরে যমুনা নদীর ভাঙনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা সদর ও আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতবিক্ষত। ফলে সিরাজগঞ্জের মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে চৌহলী। ক্রমাগত ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে হাজারো মানুষ। ভাঙনে বিলীন হয়েছে শত শত একর আবাদি জমি, বসতভিটা, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সারা বছরই এখানে ভাঙন চলে।

যমুনার প্রবল ঘূর্ণাবতের্র প্রভাবে জেলার ভৌগোলিক সীমারেখার মানচিত্র থেকে আশিভাগ জায়গা এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে নদীতে। প্রতি বছরই ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে পাউবো। বিগত বছরেও তীর রক্ষায় এখানে নেওয়া হয় কমবেশি নানা উদ্যোগ। কোনো উদ্যোগই যেন কার্যকর হচ্ছে না যমুনার কাছে। গত ৪ বছরে বিলীন হয়েছে চৌহালী উপজেলা হেডকোয়ার্টার, থানা ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পশু হাসপাতাল, ইউএনও অফিস, পল্লী উন্নয়ন ভবন, ডাকঘর, পরিবার কল্যাণ দপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস, তিনটি সরকারি কোয়ার্টার, ঘোরজান ইউনিয়ন পরিষদ, এনজিও মানব মুক্তি অফিস, খাসকাউলিয়া কবরস্থান।

উপজেলা পরিষদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়াও ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চারটি হাট-বাজারসহ প্রায় ৩০ হাজার ঘরবাড়ি ও ১৫ হাজার একর আবাদি জমি যমুনায় বিলীন হয়েছে। বর্তমানে জোতপাড়ায় চৌহালী উপজেলা ডিগ্রি কলেজে অস্থায়ীভাবে চলছে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিস ও পুলিশ স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম। অন্যদিকে, খাসকাউলিয়া আলহাজ সিদ্দীক ফাজিল মাদ্রাসায় অস্থায়ীভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই কোনো কোনো স্থানে সরকারি অফিসের অস্থায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় প্রায়ই নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ উপজেলাবাসী।

পাউবো, উপজেলা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত হয়েছে চৌহালীর বিস্তীর্ণ জনপদ। ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা বিগত দু’দশক ধরেই ভাঙনের তীব্রতার কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। চৌহালীর মানচিত্র থেকে আশিভাগ জায়গাই যমুনায় বিলীন হয়েছে। বাকি অংশও হুমকির মুখে। অন্যদিকে, গত ২০১৭ সালে দেশি-বিদেশি অর্থায়নে ‘ফ্যাড অ্যান্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্ট’ কর্মসূচির অধীনে চৌহালীতে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৭ কিমি দৈঘ্যের্র তীররক্ষা বাঁধের কাজ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য চৌহালী ও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার বিশাল জনপদ যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষা করা। প্রকল্পটি তড়িঘড়ি করে শেষ করা হলেও বার বার ভাঙনের কারণে আশাতীত টেকসই হয়নি। দুটি তীররক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার আগেই কমপক্ষে ১৫-১৬ বার ধস দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন চৌহালীবাসী।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানওয়ার হোসেন  বলেন, আমি নিজেও চৌহালীবাসীর সঙ্গে প্রায়ই শঙ্কায় আছি। আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। ভাঙন রোধে প্রায়জনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের জানিয়েছি।

পাউবোর টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চৌহালীর আপ ও ডাউনে ভাঙন ঠেকাতে ৩০ হাজার জিওব্যাগ নিক্ষেপ করা হলেও এখনও ঝুঁকি রয়েই গেছে। এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ার আগে উপজেলা সদরের আপে প্রায় ১২ কিমি এবং ডাউনে প্রায় ৩২ কিমি অংশে তীররক্ষা প্রকল্প আগে গ্রহণ করা উচিত।

ফ্ল্যাড অ্যান্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কারণে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি।

এই বিভাগের আরও খবর