,

ভরা মৌসুমেও দুর্দিনে উপকূলের জেলেরা

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। নদ-নদী ও সাগরে জেলেদের মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু জেলেদের সেই ব্যস্ততা নেই। কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপে উপকূলজুড়ে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই নদ-নদী ও সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে মাছ শিকারে যেতে না পেরে উপকূলীয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বেশিরভাগ জেলে দুর্দিনে রয়েছে।

আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন- এ চার মাস ইলিশের মৌসুম। বছরজুড়ে এ অঞ্চলের জেলেরা এই সময়টারই প্রতীক্ষায় থাকে। কিন্তু স্থানীয় জেলেরা বলছেন, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছেন না তারা। সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা পড়েছেন আরও বিপাকে।

নদ-নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় ট্রলার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন তারা। মাছ শিকারে যেতে না পেরে চরম দুঃসময় পার করতে হচ্ছে বেশিরভাগ জেলের। মহাজনের দাদন ও ঋণের কিস্তি কিভাবে পরিশোধ হবে, এমন দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে।

মাছ শিকারে যেতে না পেরে বিপাকে থাকা উপজেলার দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের জেলে খালেক হোসেন বলেন, লোনের (ঋণের) কিস্তির জ্বালায় খুব কষ্টে আছি। সংসার চালানের মতো টাহাও (টাকা) পকেটে নাই। বউ-পোলাপান লইয়া খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইতাছি (কাটছে)।

মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৯৪ জন। অপরদিকে জেলেরা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এ উপজেলায় শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ মানুষ মৎস্য পেশার ওপর নির্ভরশীল।

জেলেরা জানায়, গত ১০ দিন ধরে উপকূলে এমন বৈরী আবহাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদ-নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় উপজেলার চরমোন্তাজ, কোড়ালিয়া ঘাট, নিজকাটা, জাহাজমারা ঘাটসহ উপকূল তীরবর্তী এলাকায় শত শত ট্রলার নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। জীবনবাজি রেখে যারাও মাছ শিকারে যাচ্ছে, তারাও ফিরছে খালি হাতে। মাছ শিকারে না গিয়ে অসংখ্য জেলে বেকার সময় পার করছে।

এই আবহাওয়া কবে ঠিক হবে, আর কবে তারা মাছ শিকারে নামবে এমন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। সাগরে মাছ শিকারী কোড়ালিয়া গ্রামের জেলে আজাহার মিয়া বলেন, ৮-১০ দিন ঘাটে, কোনো কামাই (বাণিজ্য) নাই, সাগরে মাছ নাই। মাছ পাইলে জীবনবাজি নিয়া হইলেও যাইতাম। সব জাইল্লারা (জেলে) ডাঙায়। দুই একজন যারা গেছে, ৫০-৭০ হাজার টাকা খরচ হইছে। আর মাছ পাইছে ৮-১০ হালি। এই লাইগ্যা (জন্য) কেউ যায় না।

কোড়ালিয়া ঘাটের মৎস্য আড়ৎদার নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে আড়তে কোনো ইলিশ আসছে না। আবহাওয়া খারাপ থাকায় সিংহভাগ জেলে নৌকা-ট্রলার নিয়ে এখন তীরে আছে। অনেকে মৎস্য বন্দর মহিপুর গিয়েও আশ্রয় নিয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, উপকূলে ৩ নম্বর সংকেত এবং লঘুচাপের কারণে বৈরী আবহাওয়া থাকায় জেলেরা নিরাপদে অবস্থান করছে।

আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে জেলেরা মাছ শিকারে যাচ্ছে না। এর কারণে এই মুহূর্তে অসংখ্য জেলে বেকার সময় পার করছে। তবে আশার কথা হলো, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ভিজিএফ চালের দ্বিতীয় কিস্তি আগামী মাসে বিতরণ করা হবে।

এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, একোয়াকালচার এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক ও গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বছর করোনা, লকডাউন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানসহ প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে জাটকাসহ সব ধরনের মাছ শিকার কম হয়েছে।

এরমধ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাও ছিল। এতে করে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে মাছের প্রাপ্যতার কমতি নেই। আশা করি, পরিস্থিতি ঠিক হলে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। হাঁসি ফুটবে জেলেদের।

এই বিভাগের আরও খবর