,

বিজয় এসেছিল পতাকা উড়িয়ে

বিডিনিউজ টেন ডেস্ক: আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয় দিবস এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবময় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র লড়াই এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দিনে আমরা প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে যুগ যুগ ধরে এ দিনটি আমাদের প্রেরণা জোগাবে।

বিজয় দিবসের পটভূমিতে রয়েছে দুই শতকের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। এদেশের মানুষ পরাধীনতার গ্লানি বহন করেছে দীর্ঘকাল। প্রথমে ব্রিটিশদের হাতে, এরপর পাকিস্তানিদের হাতে আমরা পরাধীন হই। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর আসে পাকিস্তানি শাসন। পাকিস্তানের শাসকরা বাঙালিদের ওপর আধিপত্যবাদ ও দমননীতির পথ বেছে নেয়। তারা আমাদের জাতীয় জীবনের সমুদয় মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এমনকি আমাদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাই ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় পাকিস্তানিদের কবল থেকে আমাদের মুক্তির লড়াই। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৯০ হাজার সৈন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের এই ঐতিহাসিক দলিলটি স্বাক্ষরিত হয় রমনার রেসকোর্স ময়দানে, বিকাল ৪টা ১ মিনিটে। এ দলিলে স্বাক্ষর করেন বিজয়ী বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর পক্ষে কমান্ডার-ইন-চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, আর পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। বাংলাদেশের পক্ষে সেখানে ছিলেন এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার।

বিজয় দিবস শুধু আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনা জাগরণেরও দিন। তাই এই দিনে প্রত্যেক বাঙালি নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়- বিশ্বসভায় আমরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, যেন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারি, অশিক্ষা ও দারিদ্র্য থেকে দেশকে মুক্ত করে একুশ শতকের অগ্রযাত্রায় শামিল হতে পারি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যেমন আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তেমনি তা রক্ষা করতেও প্রয়োজন হলে আরও এক সাগর রক্ত দেব।

শুধু বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা নয়, এ বিজয়কে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের মাধ্যমে অর্থবহ করতে হবে। তবেই ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য হল, আমাদের দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতাকে দেশের বৃহত্তর জনসমষ্টির কাছে অর্থপূর্ণ করে তোলা। প্রতি মুহূর্তে আমাদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন, এই বিজয় সমগ্র জাতির বিজয়। কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠী বা কোনো দলের বিজয় নয়। বিজয় দিবসে ভাবতে হবে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের কথা; তাদের চিন্তাভাবনা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। তাদের দুঃখ-বেদনার কথা। তাদের বঞ্চনার কথা। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সার্থকভাবে মোকাবেলা করার কথা। দলীয় মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়ে গোটা সমাজে জীবনবোধ প্রতিষ্ঠার কথা। তাহলেই আমাদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা সার্থক হবে।

এই বিভাগের আরও খবর