,

ফের কার্যক্রম শুরু করেছে গুঁড়িয়ে দেয়া ইটভাটা

ব্যুরো অফিস, চট্টগ্রাম: দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও আঁচড় পড়েনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার অবৈধ ইটভাটাগুলোতে। কোনো কোনো ইটভাটাগুলোতে জরিমানা ও অভিযান চালানো হলেও আবারও শুরু হয়েছে তাদের কার্যক্রম।

নিষিদ্ধ বয়লার চিমনি ব্যবহার করায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ ঢেমশা এলাকার ফোর বিএম নামে একটি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কয়েক দিন যেতে না যেতেই এ ইটভাটায় আবারো শুরু হয়েছে কার্যক্রম।

তবে এবার বয়লার নয়, কাঠ পুড়িয়ে সরাসরি ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। একইভাবে প্রথম দফায় গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উত্তর পাশে গুঁড়িয়ে দেওয়া মেসার্স শাহজালাল ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচার্স ও সেভেন বিএম নামে আরও দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটায় নতুন করে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে।

রহস্যজনকভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফায় গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রায় সবটিতেই এখন আগের মতো ইট প্রস্তুত, পোড়ানো হচ্ছে। সবই ওপেন সিক্রেট সিস্টেমে।

ইটভাটায় কর্মরত একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের ইশারায় মালিকপক্ষ আবারো ভাটা চালু করেছে। প্রতিবছরই প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ইট পোড়ানো হয়। ওপর মহল থেকে চাপ আসলে নামমাত্র অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে দিন গড়াতেই আবার শুরু হয় এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার ঢেমশা এলাকায় সর্বশেষ জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালায়। অভিযানে থ্রি স্টার ব্রিকস, ফোর বিএম, ফাইভ বিএম নামে তিনটি ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়।

যদিও এর ৫০-১০০ গজের মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শাহ আখতারিয়া ব্রিকস, নূর হোসাইন ব্রিকস, তালুকদার ব্রিকস, শাহ জালাল ব্রিকস, জিলানি ব্রিকসে আঁচড় লাগেনি বিন্দুমাত্র। সময়স্বল্পতা ও যান্ত্রিক অসুবিধার কারণ দেখিয়ে সেদিনই অভিযান সমাপ্ত করেন জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে ফসলি জমিতে ৩৩টি, এওচিঁয়া-ছনখোলা এলাকায় ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কোনটি ফসলি জমিতে, আবার কোনটি পাহাড়ের বুক চিরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা। তাদের কারো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, আবার কারো জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই।

কারো কারো অনুমোদনের মেয়াদ গেছে বহু আগে। সবমিলিয়ে সাতকানিয়ায় অন্তত ৩০টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে; যার মধ্যে অভিযান হয়েছে মাত্র ১৫টিতে। এরমধ্যে উচ্ছেদ হয়েছে ৮টি, জরিমানা করা হয়েছে ৭ ইটভাটার। যদিও উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটার প্রায় সবই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

এদিকে আগামীকাল ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব অবৈধ ইটভাটা ভেঙে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা উচ্চ আদালতের। প্রতিবেদনে যুক্ত করতেই এসব অবৈধ ইটভাটায় লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, অভিযান চালিয়ে যাওয়ার দুয়েক দিনের মাথায়ই এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়। কাঁটা ঘা শুকোতে না শুকোতেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে না পারলে অবৈধ ইটভাটা মালিকরা কী লাখ টাকার ঝুঁকি নেবে- এমন প্রশ্নও তাদের।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ গুঁড়িয়ে দেয়া। পরিবেশ অধিদপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এরপরের দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। হাইকোর্টের রিটে স্থানীয় ইউএনও ও ওসিকেও বিবাদী করা হয়েছে।

বাকি অবৈধ ইটভাটাগুলোতে কবে নাগাদ অভিযান পরিচালনা করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের লোকবলের কথাও বিবেচনায় আনতে হবে। নিয়মনুযায়ী প্রতিদিন দুটি করে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছে করা যায়, সেই হিসাবে আমাদের ৯০ দিনের মতো সময় প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর