,

পড়াশোনা করার ‘অপরাধে’ গৃহবধূ নির্যাতন

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: মেয়েটির বাবা সিকিউরিটি গার্ড। স্বল্প আয়ের টানাটানির সংসার। মেয়ে রোকসানা আক্তারের পড়াশোনার খুব ইচ্ছা। অনেক লড়াই করে রোকসানা রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স করে এবার মাস্টার্স ফাইনাল দেবে। এর মাঝে ৮ বছর আগে রাজবাড়ীর শাহ আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীও উৎসাহ দেয় তার পড়াশোনায়। কিন্তু বাদ সাধে শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যরা। মেয়েদের পড়াশোনা তাদের পছন্দ নয়। রোকসানা এবং তার স্বামীর ওপর এ কারণেই নেমে আসে নির্যাতন।

রাজবাড়ী সদর থানার রামকান্তপুর গ্রামের পাঠানপাড়ার গৃহবধু রোকসানা আক্তারকে গত ২১ এপ্রিল বড়ই গাছের পাতা নিয়ে তুচ্ছ ঘটনায় ভয়াবহ নির্যাতন করেছ তার দুই দেবর কালাম মোল্লা, মিজানুর রহমান মিলন এবং কালাম মোল্লার স্ত্রী সীমা আক্তার। সব ঘটনা দেখেও নীরব সমর্থন দিয়ে গেছে শ্বশুর আইনুদ্দিন মোল্লা এবং শাশুড়ি আয়েশা বেগম। নির্যাতনের ফলে তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে দুই সন্তানের জননী রোকসানার। যার একটি শিশুর বয়স সাড়ে তিন বছর এবং অপর শিশুটির বয়স ১৫ মাস।

আজ শনিবার  রোকসানা আক্তার বলেন, ‘৮ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। তখন আমার দরিদ্র বাবা ৫০ হাজার টাকা এবং দেড় ভরি সোনার গহনা যৌতুক হিসেবে দিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই আমার এবং আমার স্বামীর ওপর নির্যাতন শুরু হয়। তারা সবসময় আরও টাকা দাবি করে আসছিল। আমার স্বামী সবসময় আমাকে সমর্থন দেওয়ায় তাকেও মারধর করতেন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং দেবররা। আমি পড়াশোনা করে চাকরি করি এটা তারা চাইত না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার বড়ই গাছ নিয়ে তুচ্ছ ঘটনায় আমার দুই দেবর এবং তাদের স্ত্রী মিলে আমাকে বাঁশ-লাঠি দিয়ে মারধর করে। মেঝ দেবর এবং তার স্ত্রী আমার বুকের জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলে। শ্বাশুড়ি দেখেও কিছু বলেনি। আমাকে ওরা এত মেরেছে যে তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেছে। আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এখন শ্বশুরবাড়িতেই আছি। লকডাউনের কারণে বাড়িতেও যেতে পারছি না। এখানে প্রতিনিয়ত অভিযুক্তরা আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। দেবররা নাকি টাকা দিয়ে সব কিনে ফেলবে। আমি এখন ভীষণ আতঙ্কে আছি।’

এদিকে রাজধানীর উত্তরায় থাকা রোকসানা বাবা-মা এখন পাগলপ্রায়। কিন্তু লকডাউনের কারণে তারা মেয়ের কাছে যেতেও পারছেন না। ঘটনার পর রোকসানা থানায় গিয়েছিলেন মামলা করতে। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ তার। এই তিন দিনের মাঝে তদন্ত কর্মকর্তাও বদল হয়েছে। তবে মামলা নেওয়ায় গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘এটা তেমন কোনো বড় ঘটনা নয়। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ পাঠিয়েছি। আমরা ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর