,

নতুন দিনের কারাগার পেল ফেনী

ফেনীতে নবনির্মিত জেলা কারাগার

ফেনী প্রতিনিধি: ১৭২ জনের স্থলে ৮৯৩ জন বন্দী রয়েছে ফেনী জেলা কারাগারে। অতিরিক্ত বন্দীর চাপে গাদাগাদি করে অনেক কষ্টে দিন পার করছিলেন বন্দীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ফেনীতে নবনির্মিত জেলা কারাগার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বন্দীদের কষ্টের ইতি ঘটে তারা পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা কারাগারসহ ৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হলো-৩৫০ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জেলা কারাগার, ফেনী সদর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও ২৮টি ইউনিয়ন পরিষদের উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি।

এ উপলক্ষে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে তার সম্মেলন কক্ষে এক সুধি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সময় ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শারমিন আক্তার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক দেবময় দেওয়ানসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে নব নির্মিত অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা হয় ফেনী জেলা কারাগার। ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর ও মালিপুর মৌজায় ৩৫০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কারাগারটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ফেনী জেলা কারাগারে বন্দীদের মানবেতর জীবন যাপনের ইতি ঘটবে বলে মনে করছেন বন্দীরা।

বর্তমানে কারাগারটিতে ১৭০ জন পুরুষ বন্দীর স্থলে ৮৭২ জন ও ২ জন নারী বন্দীর স্থলে ২১ জন বন্দী রয়েছেন। সব মিলে ১৭২ জনের স্থলে বর্তমানে কারাগারে ৮৯৩ জন বন্দী রয়েছেন। অতিরিক্ত বন্দীর চাপে তারা সব সময় কারা অধিদফতরের আইন অনুযায়ী বৈধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন।

ফেনী জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৯১৫ সালে শহরের মাস্টার পাড়ায় মাত্র দেড় একর জায়গার ওপর প্রথমে উপ-কারাগার (সাব-জেল) হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে উপ-কারাগার থেকে এটি জেলা কারাগারে উন্নীত হয়।

তবে জেলা কারাগারে উন্নীত হলেও বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধা। একদিকে শত বছরের পুরনো অবকাঠামো, অন্যদিকে অপ্রতুল জায়গায় ধারণ ক্ষমতার তিন-চারগুণ বেশি বন্দী নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হতো। গাদাগাদি করে শোয়া, থাকা-খাওয়া, গোসলসহ নানা সমস্যায় বন্দীদেরও দুর্ভোগের যেন নেই শেষ। বন্দীদের চিকিৎসায় কারাগারে ছিলো না হাসপাতাল।

পুরোন কারাগারে নিয়মিত আত্মীয় স্বজনদের খবরা-খবর নিতে আসেন আবুল কাশেম। তিনি বলেন, পুরোনো কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে কথা বলাটা এক ধরনের অসম্ভব। এখানে একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন দর্শনার্থী সব সময় থাকেন। এতে করে অতিরিক্ত কথার আওয়াজে শব্দ দূষণে কিছুই বোঝা যায় না। যারা বিত্তবান তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভিআইপিতে দেখা করে। এছাড়াও এখানে দর্শনার্থীদের বসার স্থান নাই।

এ সব সমস্যা নিরসনে ১৯৯৬ সালে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে কারাগারটি বড় পরিসরে নতুন জায়গায় সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেলা কারগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় শহরের অদূরে রানীরহাট এলাকায় সোনাপুর ও মালিপুর দুই মৌজায় নতুন কারাগার নির্মাণের জন্য সাড়ে সাত একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে প্রকল্পের কাজ থেমে যায়।

২০০৮ সালে বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়। জেলা গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এই জেলা কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।

নতুন কারাগারটি সম্পূর্ণ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ৩৫০ জন বন্দী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক এই কারাগারে বন্দী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য থাকছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে- একটি দোতলা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল, বন্দীদের কাউন্সেলিং এবং তাদের মাঝে কর্মস্পৃহা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানে বিভিন্ন ওয়ার্ক শেড, খেলার মাঠ, পুকুর, উদ্যান, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নবনির্মিত এই কারাগার বন্দীদের বন্দী জীবনকে নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক ও তাদের পরিশুদ্ধ জীবন গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণপূর্ত অধিদফতর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মো. বদরুজ্জামান জানান, আধুনিক সিসিটিভি সম্বলিত নির্মাণাধীন জেলা কারাগারে পুরুষ ব্যারাক, নারী ব্যারাক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, হাসপাতাল, ওয়ার্কসিটসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কারা সুপার রফিকুল কাদের জানান, উদ্বোধনী কার্যক্রম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দিদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। এতে করে বন্দীদের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাপ্তি ঘটবে।

এই বিভাগের আরও খবর