,

ত্রাণের পৌনে তিন লাখ কেজি চালের হদিস নেই

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদককরোনা ভাইরাসের ভয়াল মহামারিতে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। কোভিড-১৯ এতো দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে যে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিকদের রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ছোটো-বড়ো, উন্নত-অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোকে।

অদৃশ্য এই মরণঘাতি ভাইরাস মোকাবিলায় অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বিশ্ববাসী। আক্রান্ত ২১০টি দেশ এই ক্রান্তিকালে জরুরিভিত্তিতে তাদের নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আর এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুর্নীতিবাজ ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাদের কারণে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত ও সমালোচনার শিকার হচ্ছে। সেই সঙ্গে মূল সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের বিদ্যমান সমাজ কাঠামো।

উন্নত, অনুন্নত সব দেশেই করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ করে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর যোগান দিতে হচ্ছে জরুরিভিত্তিতে। ফলে সাধারণ নিয়ম থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ঐসব মালামাল সরবরাহের সুযোগ ও অর্ডার দেওয়া হচ্ছে। এখানে সুযোগ নিচ্ছে দুর্নীতিবাজ ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ পকেটে ভরছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ‘দুর্নীতির মহামারি…’—শিরোনামে এই প্রতিবেদনের মধ্যে আছে বাংলাদেশ, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়ার কথা। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের চাল কেলেঙ্কারি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও লকডাউন চলছে। লকডাউনের ফলে কর্মহীন মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। লকডাউনে ঘরে আটকা পড়া মানুষজনের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের জন্য ঐ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলেও ৬ লাখ পাউন্ড বা ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার (২ লাখ ৭২ হাজার কেজি) চালের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রায় ৫০ জন আমলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে বেশি দামে পুনরায় চাল বিক্রির অভিযোগ। ফলে সরকার তাদেরকে বাইপাস করে ত্রাণ পরিকল্পনা ঢেলে সাজিয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারি চাল বাজারে বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের আইনজীবী দলের প্রধান ম্যাক্স হেইউড বলেন, সংকটের সময়ে এভাবে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়াটা চিন্তার বিষয়। জনগণের জন্য যে অর্থ ব্যয় করার কথা বলা হচ্ছে, সেই পদ্ধতিতে আসলে একটা ফাঁক থেকে গেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এমন জাতীয় দুর্যোগ সহমর্মিতা, সংহতির মতো মানুষের সেরা গুণগুলো বের করে আনে, যার প্রমাণ আমরা নানা ক্ষেত্রে দেখি। কিন্তু সবচেয়ে অনুতাপ ও লজ্জার বিষয় এ সময় মানুষের সবচেয়ে খারাপ দিকটাও বেরিয়ে পড়ে। এই মানবিক সংকটের সময় অনেক খারাপ ঘটনাও ঘটতে দেখছি।’

এই বিভাগের আরও খবর