,

চাকরি নাই, বেতন আছে!

জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদরের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার জামায়াত নেতা শরিফ উদ্দিন মাজহারীকে গত ১৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে নিজ বাড়ি থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বেশ কিছু দিন হাজত বাসের কারণে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি ২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পরে অধিকতর তদন্তে ওই সুপারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে অমিল, নাগরিকত্ব ও শিক্ষক স্টাফিং প্যাটার্নে গড়মিলসহ নানা অসংগতি পাওয়ায় ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে চুড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা অনুমোদনের জন্য আপিল এ্যান্ড আরবিট্রেশন পাঠানো হয়।

তখন থেকেই তার সরকারি অংশের বেতন ভাতা বন্ধ থাকলেও হঠাৎ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিতে পুনঃবহাল না করলেও রহস্যজনক কারণে ৩ মাসের বেতন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভারপ্রাপ্ত সুপার বলছে, বিশেষ কারণে বিধি বহির্ভূত ভাবেই তাকে এই বেতন প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু তার চাকরি নাই, কেন বেতন দেওয়া হলো এই নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। গুঞ্জন চলছে আবারো জামায়াত নেতাকে স্বপদে চাকরিতে পুনঃ বহাল করারও জোর তদবির চলছে।

জানা গেছে, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নছিরপুর গ্রামের মোঃ আব্দুর রহমানের ছেলে শরিফ উদ্দিন মাজহারী ১ জানুয়ারি ১৯৯৪ সালে রাণীনগর আল আামিন দাখিল মাদ্রাসায় সুপার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। শুরুতেই তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় নিয়মনীতিতে তোয়াক্কা না করে বিশেষ ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চাকরি করে যান তিনি।

১৩ জুলাই ২০১৬ সালে রাণীনগর থানা পুলিশ গোপন সংবাদে জানতে পারে মোঃ শরিফ উদ্দিন মাজহারীর পূর্ব বালুভরা গ্রামের ভাড়া বাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র ১৪ থেকে ১৫ জন সক্রিয় সদস্য নিয়ে জঙ্গি তৎপরতা চলানোর উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছেন। এমন সংবাদে পুলিশ তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মিটিংয়ে থাকা জেএমবি’র সদস্যরা পালিয়ে গেলেও শরিফ উদ্দিন মাজহারীকে মুক্তির আলোর পথ নামক ১৬টি জিহাদী বই, একটি ইসলাম বিরোধী তথ্য সন্ত্রাস বই এবং তিনটি ককটেলসহ গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করে।

পরে রাণীনগর থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করলে ওই তথ্যের ভিত্তিতে রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার ম্যানিজিং কমিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে প্রতিবেদনে ওই সুপারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে অমিল, নাগরিকত্ব ও শিক্ষক স্টাফিং প্যাটার্নে গড়মিলসহ নানা অসংগতি পাওয়ায় তাকে চুড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করে। পরে শরিফউদ্দিন মাজহারী ২০১৭ সালে হাইকোটে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে মহামান্য হাইকোট তা বাতিল করেন।

রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত সুপার শরিফ উদ্দিন মাজহারী জানান, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিই প্রধান। বেশ কিছুদিন আমার বেতন বন্ধ ছিলো। কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আমাকে ৩ মাসের বেতন দিয়েছে। আশা করছি সকল সমস্য কাটিয়ে শিগগিরই আমাকে কর্তৃপক্ষ স্বপদে বহাল করবে। আমার বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে তা ষড়যন্ত্রমূলক এবং মিথ্যা।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, চুড়ান্ত বরখাস্তকৃত সুপার শরিফ উদ্দিন মাজহারীকে বিধি সম্মত ভাবে বেতন দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও বিশেষ চাপের কারণে তাকে ৩ মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমরা খুব বেকায়দায় আছি।

রাণীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, আমি কয়েক মাস আগে যোগদান করেছি। ওই প্রতিষ্ঠান বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। যতটুকু জানি সুপারের ব্যাপারে মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে। তারপরও যদি কমিটি বেতন দিয়ে থাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর