,

কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ নির্মাণ: ২ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার আশংকা

লিয়াকত হোসেন লিংকন:  গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে পাউবোর সেচ ও পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় ছয় লেন বিশিষ্ট ভাটিয়াপাড়া-কালনা সেতু এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।

ফলে ভাটিয়াপাড়াসহ উপজেলার বরাশুর, ধুসর, বুধপাশা, রাতইল ও পোনা গ্রামের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বোরো আবাদ ও সেচ ব্যবস্থা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হয়ে পড়বে কয়েক শ’ পরিবার ও তাদের ক্ষেত-খামার। খালটি বন্ধ করে সড়ক নির্মাণ ও খালের মধ্যে বালুর চাতাল করায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ এবং খাল সংস্কারের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাটিয়াপাড়া খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গোপালগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ^জিৎ বৈদ্য চলমান ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় পাউবোর সেচ ও নিষ্কাশন খালটি একদিকে ধুসর ও বিলপবনের বিল এবং অন্যদিকে মধুমতি নদীর সাথে একটি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পুরুলিয়া-চরভাটপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ উপ-প্রকল্পের পুনর্বাসন কর্মসূচীর অধীনে খালটি পুন:খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ না করা হলে খাল খননের উদ্যোগ সফল হবে না। ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা, খালের উভয়পাড়ে আবাদী জমির কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ধুসর ও বিলপবনের বিলের পানি নির্গমনসহ এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সাংসদ, পাউবোর তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী (ফরিদপুর সার্কেল), জেলা প্রশাসকসহ ছয়টি দপ্তরে অনুলিপি প্রেরণ করেছেন। এ ব্যাপারে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে খাল ভরাট করে পুরোদমে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ভাটিয়াপাড়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ও পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি বন্ধ করে খালের মধ্যদিয়ে ভাটিয়াপাড়া-কালনা সেতু এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে। এমনকি খালের মধ্যে চাতাল করে সেখানে পাইপলাইনের মাধ্যমে বালু এনে ফেলছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে উপজেলার বরাশুর এলাকায় বসবাসরত অর্ধশতাধিক পরিবার ওই এলাকার ফসলি জমির পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। গত বর্ষায় বরাশুর এলাকায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। আগামী বছর আরও বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দিবে। হাজার হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

কৃষক লীগের নেতা নান্টু শরীফ বলেন, ‘খাল বন্ধ করে সড়ক নির্মাণের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। শুষ্ক মৌসুমেও বোরো আবাদে সেচ সংকট দেখা দিবে এবং কোন কোন এলাকায় বসতবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়বে। জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার ফসল ডুবে হাজার হাজার কৃষক অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে সড়ক নির্মাণ কাজ করা হোক।’

কৃষক বাবু শরীফ বলেন, ‘খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করায় জমিতে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদে সেচ ব্যবস্থাও একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বছর আর এসব জমিতে চাষাবাদ করা যাবে না। এখনই কোন স্থায়ী উদ্যোগ না নিয়ে আগামীতে এসব এলাকার ফসলি জমিতে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দিবে।’

খালের তীরবর্তী বরাশুর গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৬০) বলেন, ‘খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ ও খালের মধ্যে বালুর চাতাল করে সেখানে বালু ফেলার পর থেকে একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে যায়। হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলের ঘর, রান্না ঘর ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না।’

সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সওজের উদাসিনতা ও খামখেয়ালিপনা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থন্বেষী মনোভাবের কারণে ব্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আমরা ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম কনস্ট্রাকশনের মহাসড়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ সওজ ও পাউবোর ওপর নির্ভর করছে। আমরাতো ঠিকাদার। আমাদের যেভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা সেভাবে কাজ করবো। তবে দু’বিভাগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গেছে। আমরাও বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।’

নির্মাণাধীন সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিএম (সওজ) প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন জানান, মূল ডিজাইনে ওখানে কোন ব্রিজ বা কালভার্ট নেই। খালটি অনেক আগে থেকে বন্ধ ছিল। কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘জনগণের দাবিতে ভাটিয়াপাড়া খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর