,

আজ মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বাইডেন

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেশ জোরেশোরেই সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এবং বর্তমান প্রশাসনের অসহযোগিতা উপেক্ষা করে মঙ্গলবার বাইডেন নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।

এদিকে পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা। খবর বিবিসি, আনন্দবাজার, রয়টার্স ও সিএনএনের।

হোয়াইট হাউসের নতুন চিফ অব স্টাফ রন ক্লাইন বলেছেন, বাইডেন এখন সরকার গঠনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার তিনি নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন। রোববার এবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্লাইন বলেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম শিগগিরই দেশবাসী দেখতে পাবেন।

প্রথম ধাপে কোন কোন মন্ত্রণালয় থাকছে বা কারা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন-সেটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। বাইডেনের মুখ থেকেই সবকিছু জানতে পারবেন। ক্লেইন জানান, বাইডেন তার মন্ত্রিসভার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ঘোষণা করবেন। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২০ জানুয়ারির ক্ষমতা গ্রহণ অনুষ্ঠান সীমিত রাখা হবে।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের টিমকে অসহযোগিতার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষারোপ করেছেন ক্লাইন। তিনি বলেন, বাইডেন ও কমলা হ্যারিস এখনও গোয়েন্দা ব্রিফিং পাচ্ছেন না। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ডাটাও তাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয় না। প্রশাসনে লোক নিয়োগসহ কোনো কাজের জন্য ফেডারেল অর্থের ছাড়ও দেয়া হয়নি।

জানা গেছে, আমেরিকার অর্থনীতির চরম দুর্বিপাকের সময়ে অর্থমন্ত্রীর মনোনয়নের মধ্য দিয়ে বাইডেন একটা চমক দেখাতে পারেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) চূড়ান্ত করেছেন। তবে পরিচয় না দিয়ে তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটের সব পক্ষের দিকে লক্ষ রেখেই অর্থমন্ত্রী বাছাই করা হয়েছে। এদিকে রোববার একটি মার্কিন গণমাধ্যম বলেছে, বাইডেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে পারেন। সব ঠিকঠাক থাকলে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী (ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট) হিসেবে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন ব্লিংকেন।

বাইডেন প্রশাসনে আরেকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্থান পেয়েছেন। হোয়াইট হাউসের চার নতুন কর্মীর নাম ঘোষণার সময়ে শুক্রবার মালা আডিগার নামও ঘোষণা করেন বাইডেন। হবু ‘ফার্স্ট লেডি’ অর্থাৎ জিল বাইডেনের নীতিনির্ধারকের পদে মালাকে বসানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শিকড় আছে এমন মানুষ বাইডেনের প্রশাসনে বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছেন। সেটা আগাগোড়াই বোঝা গিয়েছিল।

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস থেকে শুরু করে কয়েকজন বাইডেনের মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে যাচ্ছে। মালার সঙ্গে বাইডেনদের সম্পর্ক অনেকদিনের। বাইডেন-কমলা হ্যারিস প্রচারের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন তিনি। ছিলেন বাইডেন ফাউন্ডেশনের হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড মিলিটারি ফ্যামিলিজ বিভাগের প্রধান হিসেবেও। বারাক ওবামার প্রশাসনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

ইলিনয়েসের বাসিন্দা মালা পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো ল স্কুলে। গ্রিনেল কলেজ থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েট। পেশায় আইনজীবী মালা শিকাগোর একটি আইনবিষয়ক সংস্থায় দীর্ঘদিন পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।

ট্রাম্পকে পরাজয় মেনে নিতে আহ্বান ঘনিষ্ঠ দলীয় মিত্রদের : ৩ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার পর ২০ দিনের মতো পার হয়ে গেলেও ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়াই এখনও কারচুপির অভিযোগ করে যাচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে বিরোধ জটিল করে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই তার পক্ষে কথা বললেও বিরোধিতাকারীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার অনড় অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির উল্লেখযোগ্য নেতা। ট্রাম্পের আইনজীবীদের মধ্যে বিরোধও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।

সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের সাবেক প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, যথারীতি ২০ জানুয়ারি বাইডেন শপথ নেবেন। তিনি আরও বলেন, রাস্তার বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য ট্রাম্প এখন যেন জানালা দিয়ে পাথর ছুড়ছেন। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি।

তিনি বলেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি বা কারচুপির অভিযোগ বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পকে আইনি সহায়তা দানকারী টিমকে জাতির কলঙ্ক হিসেবেও তিনি আখ্যায়িত করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের ফল বদলে দিতে ট্রাম্প এখনও যেসব চেষ্টা চালাচ্ছেন, তা বন্ধ করে বাইডেনের কাছে হার স্বীকার করার আহ্বান জানান তিনি। রোববার এবিসি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টি বলেন, কোর্ট রুমের বাইরে সারাক্ষণ নির্বাচনে জালিয়াতির কথা বলে যাচ্ছে ট্রাম্পের দল।

কিন্তু কোর্ট রুমের ভেতরে তারা জালিয়াতির যুক্তি দেখাচ্ছেন না। আমি অনেকদিন ধরে প্রেসিডেন্টের সমর্থক। তাকে আমি দুইবার ভোট দিয়েছি। কিন্তু যা ঘটেনি, তবুও অনবরত সেটাই ঘটেছে বলে দাবি করতে পারি না আমরা।

২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পকে প্রথম গভর্নর হিসেবে ক্রিস ক্রিস্টি সমর্থন দিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের যেসব বিতর্ক আয়োজিত হয়েছে তাতে ট্রাম্পকে বক্তব্যের প্রস্তুতি নিতেও তিনি সহায়তা করেছেন। ক্রিস আইনজীবী সিডনি পাওয়েলের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বৃহস্পতিবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাওয়েল দাবি করেন, ইলেকট্রনিক পদ্ধতির ভোটের মাধ্যমে লাখ লাখ ভোট বাইডেনের পক্ষে বদলে দেয়া হয়েছে। বাইডেন ‘কমিউনিস্টদের টাকায় জিতেছেন’। ট্রাম্প টিমের এক বিবৃতিতে অবশ্য সিডনি পাওয়েল তাদের সঙ্গে আর কাজ করছেন না-এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও ট্রাম্প নিজে এক টুইটবার্তায় সিডনি পাওয়েলকে তার লিগ্যাল টিমের সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

সিএনএনকে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর ল্যারি হোগান বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে ভোটের ফল উল্টে দিতে চাচ্ছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দিন দিন একটি অরাজক দেশে পরিণত করতে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। গলফ খেলা বন্ধ রেখে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এক টুইটবার্তায়ও তিনি লিখেছেন, এত গলফ না খেলে নির্বাচনের হার মেনে নেয়া উচিত ট্রাম্পের।

হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে মিশিগানের প্রতিনিধি ফ্রেড আপটন বলেছেন, তার অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা নিজেদের রায় দিয়েছেন। নর্থ ড্যাকোটার সিনেটর কেভিন ক্রেমার বলেছেন, প্রশাসন হস্তান্তরের সময় পার হয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর